যশোরে রেড জোন এলাকায় লকডাউন কার্যকরে ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সোমবার যশোর জেলাকে তিনটি জোনে ভাগ করে যশোর জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সংক্রমণের উচ্চতায় থাকা ১৭ টি এলাকাকে রেড জোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে লকডাউন কার্যকরের আদেশ দিয়ে গত সোমবার বিকেলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত রেডজোন এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। রেডজোন এলাকায় জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়েও ছিল না কোনো প্রচার-প্রচারণা। তবে বিকেলের দিকে রেডজোনে কিছু কিছু এলাকা লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। সিদ্ধান্ত কার্যকরে প্রশাসনের এ ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।
যশোর সদর উপজেলার উপশহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে দুইটি স্থানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ আমার পুরো ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি দুপুর পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে বৈঠক করেছি। তিনি কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকে বিকেলের দিকে সংক্রমণ এলাকায় লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সোমবার রাতে আমি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ইউনিয়ন রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকেসহ আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। সেই আলোকে কাজ করছি’। একই কথা বলেন, সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সোমবার বিকেলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি হলেও মূলত আমরা নির্দেশনা পেয়েছি মঙ্গলবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গঠিত যশোর সদর উপজেলা কমিটির আনুষ্ঠানিক সভায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়ন রেডজোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এখানে মাত্র একটি এলাকায় করোনা রোগী রয়েছে। এ জন্য ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার সর্দারপাড়ায় রোগীর বাড়ির এলাকা সংলগ্ন রাস্তাসহ আশপাশ এলাকা মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার পর লক ডাউন করেছি। সন্ধ্যার পর মাইকিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রাত ৮ টার পর ইউনিয়নের কোনো দোকানপাট খোলা থাকবে না বলে ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, পুরো ইউনিয়নে লকডাউন কার্যকর করতে হলে অনেক জনবল প্রয়োজন। সেটি বাস্তবায়ন করতে গেলে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। তবে ইউনিয়নে মানুষের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে তিনি জানান’।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন। এ সময় তিনি ঘোপ ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুকসিমুল বারী অপুকে সাথে নিয়ে ওই এলাকায় লক ডাউনের গণবিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেন। তিনি ঘোষণা করেন করোনা সংক্রমণরোধে এ এলাকাকে অতিমাত্রায় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে রেডজোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলসহ সার্বিক যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। যশোর পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড (ঘোপ) কাউন্সিলর মুকসিমুল বারী অপু বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে নওয়াপাড়া রোডের জোড়াবাড়ি এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ির চারপাশের ১০০ মিটার কঠোরভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। ১০০ মিটারের মধ্যে অবরুদ্ধ থাকা গরিবদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। আর অন্যদের জন্য তরকারি বিক্রেতাদের সকালেই ওই এলাকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। কোনো মানুষ নির্দিষ্ট ওই এলাকায় ঢুকতে বা বেরুতে পারবেন না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রশাসন চেয়েছিল আমার ওয়ার্ডের গোটা এলাকা লক ডাউন করতে। কিন্তু সেটি আপাতত করা হচ্ছে না। আগে সংক্রমণ এলাকায় কড়াকড়ি করা হচ্ছে’।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে রেডজোনভূক্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুষ্ঠিত সভায় এ ব্যাপারে কার্যকর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো রেডজোন এলাকায় লকডাউন করার মতামত দেয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অনেকেই এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। সভায় আপাতত যেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অবস্থান করছেন, সেই বাড়ি থেকে আশপাশের ১০০ মিটার পুরোপুরি ব্লক করে দেওয়ার বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়। আর গণবিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত এলাকায় যানবাহন, দোকানপাট, জনচলাচল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বারোপ করা হয়। তবে সোমবার জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের যৌথ স্বারে একটি গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় রেড, ইয়োলো ও গ্রিন এই তিন জোনে গোটা জেলাকে ভাগ করে ১৪ দিন রেডজোন এলাকা লক ডাউন করা হবে। এই আদেশ ১৬ জুন থেকে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান বলেন, রেডজোন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে প্রচারণাসহ রেডজোন এলাকায় লক ডাউন কার্যকর করার উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। বিকেলে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বাস্থ্যবিভাগ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রেডজোনে লক ডাউন বাস্তবায়ন শুরু করেছেন।