আজ সংবাদপত্রের কালেদিবস

0

আজ ১৬ জুন বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পের কালো দিবস। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। একদলীয় ‘বাকশাল’ এর দর্শন অনুসারে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন সরকার চারটি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ছাড়া বাকি সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। সাংবাদিক সমাজ প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। ১৯৭৮ সালে অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক কাউন্সিলে গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কালো দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি পালনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। বৈশ্বিক মহামরি করোনাভাইরাসের ঝুঁকির প্রেক্ষিতে এবার অনলাইন আলোচনা সভার আযোজন করা হচ্ছে। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম সোমবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ভার্চুয়াল এ আলোচনায় জুম অ্যাপস লিঙ্কের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের যুক্ত হয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিএফইউজের অন্যান্য অঙ্গ ইউনিয়নও নিজেদের সুবিধামত উপায়ে দিনটি পালন করবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পার হতে না হতেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে আনা হয়েছিলো সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ওই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশালের’ জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত বাকশাল সরকার সকল সংবাপত্র বন্ধ করে দেয়। সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে ৪টি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করে। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের েেত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। পরে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবে ক্ষমতাসীন হয়ে সংবিধানে এ দেশের কাঙ্খিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সকল প্রকার অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
দিনটি উপলক্ষে প্রদত্ত বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাটছে দলটি। গত ১১ বছরে জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭৫ সাল আর বর্তমান শাসনামলের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদিকে অগণতান্ত্রিক সরকারের কালো থাবায় সংবাদমাধ্যম পুরোপুরি শৃঙ্খলিত। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়েছে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা। অন্যদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের সময়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন সংকটে পতিত হয়েছে। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অন্যায়ভাবে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করছে। বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ছে মাসের পর মাস এমনকি বছরাধিককাল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত, পথ নির্বিশেষে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিজ্ঞপ্তি