চৌগাছায় সুদখোরদের দৌরাত্ম্য ও এনজিও কর্মীদের কড়া তাগাদায় মানুষ অসহায়

0

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় মহামারী করোনা ভাইরাস ও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে মানুষ যখন দিশেহারা তখন শুরু হয়েছে হালখাতার চাপ। শুধু হালখাতা নয়, উপজেলা সদর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সুদখোরদের দৌরাত্ম্য আর এনজিও কর্মীদের কড়া তাগাদায় চরম অসহায় সাধারণ মানুষ। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনা করে ব্যাংক-বীমার তাগাদা ও হালখাতা আরও কিছুদিন দেরিতে করার পাশাপাশি সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।
উপজেলার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে চলছে হালখাতার মৌসুম। এই সময় বোরো ধান কাটা শুরু হয় আর ব্যবসায়ীরা হালখাতা করেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে কৃষক সব হারিয়ে দিশেহারা। বলাচলে অথৈ সাগরে একটি খড় ধরে তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। ঠিক সেই সময়ে দায় দেনায় জড়িত কৃষকের বাড়িতে আসতে শুরু করেছে হালখাতার চিঠি। কী করবেন, কীভাবে দোকানিকে ম্যানেজ করবেন এই চিন্তায় নির্ঘূম রাত কাটছে চাষিদের। এ পরিস্থিতির মধ্যেও সুদখোরদের দৌরাত্ম্য থামছে না। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, মাঠে ফসল ফলানোর জন্য দেনায় আটকে যায়। এক সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে দেনা পরিশোধ করি। তাকে প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩ মাস লাভের টাকা দিতে পারিনি। লাভের টাকা সময় মত দিতে না পারলে নেমে আসে মানসিক এমনকি শারীরিক নির্যাতন। চলতি বছরের প্রথম দিকে যশোর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে সুদখোরদের তালিকা হচ্ছে, অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে চৌগাছার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সেই সংবাদের পর ৪/৫ মাস পার হয়েছে অথচ কোন কার্যকর ব্যবস্থা না দেখে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। এদিকে করোনার কারণে ব্যাংক-বীমা, এনজিও কিছুদিন চুপ থাকলেও তারা পুনরায় তাগাদা দিতে শুরু করেছে। শুধু তাগাদা নয়, সুদ-আসলে টাকা আদায়ে এ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মরিয়া। পৌর এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাউজ বিল্ডিং থেকে লোন নিয়ে তারা বাড়ি করেছেন। মার্চ ও এপ্রিলে কিস্তির টাকা জমা দেননি। জুন মাসে কিস্তির টাকা জমা দিতে গিয়ে সুদ-আসলে সমুদয় টাকা জমা দিতে হয়েছে। হাউজ বিল্ডিং’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লাভের টাকা নেয়া যাবে কি যাবে না এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নিকট থেকে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই পাওয়া যায়নি। সে কারণে পূর্বের মতই আমরা কিস্তির টাকা গ্রহণ করছি। একই অবস্থা বিরাজ করছে এনজিওগুলোর ক্ষেত্রেও। এনজিও কর্মীদের অব্যাহত চাপের মুখে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নানা কারণে তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত সব কিছুই চলছিল। কিন্তু করোনা ও ঝড়ের কারণে তাদের সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধে আরও সময় দেয়ার পাশাপাশি সুদখোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ উপজেলার সচেতন মহল।