৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সহিংসতার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বিজ্ঞানী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর পর থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংস বিক্ষোভ। এর আগে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশটি। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ায় লকডাউনের মাঝেই দেখা গেছে বিক্ষোভ। কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে দেশটিতে। এই সহিংস, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে ৮ বছর আগেই এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন রুশ-আমেরিকান বিজ্ঞানী পিটার টারচিন। তার কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলছে।
টারচিন একজন জনসংখ্যা জীববিদ্যা বিশেষজ্ঞ।
তিনি সামগ্রিকভাবে সংগৃহীত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সমর্থনে নানা তত্ত্বের প্রবক্তা। তার তত্ত্বগুলো সাময়িকভাবে নানারকমের প্রক্রিয়া ও কারণিক কার্যপদ্ধতির সন্ধান ট্র্যাক করে ভবিষ্যৎ অনুমান করে থাকে। তিনি তার কাজের ক্ষেত্রকে ‘ক্লায়োডাইনামিকস’ বলে থাকেন। ২০১২ সালের দিকে তার কাজ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ওই সময় বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার-এ তার একটি লেখা প্রকাশিত হয়। ওই লেখায় তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা একটি ৫০ বছরের চক্র মেনে চলে। দেশটিতে আগামী সহিংসতা হানা দিবে ২০২০ সালে। টারচিনের দাবিটি অনেকের কাছে অন্য হাজারো ভুয়া ভবিষ্যদ্বাণী মনে হতে পারে। কিন্তু তার এই দাবির পেছনে রয়েছে বহু বছরের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা। আর বর্তমানে আমরা তার ভবিষ্যদ্বাণীর অল্প কিছুটা বাস্তব রূপই দেখছি। পাঠকদের জন্য, ২০১২ সালে মার্কিন অনলাইন গণমাধ্যম ভাইস’কে দেয়া টারচিনের একটি সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো। ওই সাক্ষাৎকারেই চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা তুঙ্গে উঠবে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি। এখানে তা তুলে ধরা হলো:
ভাইস: সহিংসতা নিয়ে আপনার ক্লায়োডাইনামিক তত্ত্বটি লেমেনের শর্তে ব্যাখ্যা করতে পারবেন?
পিটার টারচিন: অবশ্যই। ঐতিহাসিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমাজে বেশ লম্বা সময় ধরে সহিংসতার চক্র চলে: প্রায় এক শতাব্দী ধরে এর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময়জুড়ে চলে সহিংসতা, বা অস্থিরতা, ১০ বা ১৫ বছরের মতো। এরপর মানুষজন ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম শান্তিপ্রিয় হয়ে থাকে। এরপর তাদের নাতী-নাতনী, যারা কখনোই সরাসরি চরম পর্যায়ে অস্থিরতা দেখেনি, তারাই নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করা শুরু করে। আমার তত্ত্বমতে, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করবে ২০২০ সালে।
আপনার তত্ত্বে ‘সহিংসতা’ শব্দটি কী প্রেক্ষিতে যুক্ত করা হয়েছে?
-আমি আমার গবেষণায় তিনটি আলাদা ধরণের সহিংতা যোগ করেছি। প্রথমত, ‘ভিন্ন ভিন্ন দলের মধ্যে’, এটা আধুনিক আমেরিকার ক্ষেত্রে দাঙ্গা হিসেবে বিবেচিত হবে। এরপর রয়েছে, ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে দল’, এটি হবে গণধোলাই বা সেরকম কিছু। সর্বশেষ রয়েছে, ‘দলের বিরুদ্ধে ব্যক্তি’, এটাকে অনিয়ন্ত্রিত হত্যা বলা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন হত্যাকান্ড বেড়েছে। এ ধরণের হত্যাকান্ডে একজন মানুষ একাই একদল ব্যক্তির উপরে হামলা চালায়, যেটা মূলত সন্ত্রাসবাদ। কিন্তু এটাকে সেভাবে বর্ণনা করা হয় না। কারণ, এতে একজন আমেরিকানই অন্য আমেরিকানদের উপর হামলা চালাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ডার্ক নাইট গোলাগুলির মতো?
-হ্যাঁ, একদম ঠিক। কলাম্বাইন, ভার্জিনিয়া টেক ও টিমোথি ম্যাকভেই বোমা হামলা আরো ভালো উদাহরণ। কেননা, এসব এলোমেলো হামলা সাধারণত বড় ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়। যেমন, শিক্ষা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ধরণের ঘটনা গত এক প্রজন্মে ২০ বা তার সমান বেড়েছে।
আপনার দৃষ্টিতে এসব উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কেন?
-ঐতিহাসিকভাবে, সমস্যা সবসময় ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি ও সবচেয়ে বেশি ক্ষমতায় বসতে চাওয়া ব্যক্তিদের ঘিরেই তৈরি হয়। ক্ষমতায় বসতে চায় এমন রাজনৈতিক উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক। একসময় তারা হতাশ হয়ে পড়ে, আর তখনই দেখা দেয় বিদ্রোহের: যখন অভিজাত শ্রেণির সদস্যরা নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক শৃঙ্খলা উল্টে দিতে চায়।
(মূল প্রতিবেদনটি ভাইসডটকমে ২০১২ সালের ৩০শে অক্টোবর প্রকাশিত হয়। সময়ের ব্যবধানের জন্য প্রতিবেদনটি অনুবাদ কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে।)