ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তিগ্রস্ত চৌগাছার মানুষ গত দু সপ্তাহে কোনো সহায়তা পায়নি

0

মুকুরুল ইসলম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছা উপজেলার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দু সপ্তাহ পরেও সেই তান্ডবলিলার স্মৃতি ভুলতে পারেনি। স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় গত ১শ বছরও মানুষ দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। ঝড়ে কেড়ে নিয়েছেন মা মেয়ের জীবন, মাঠ, ঘাট, ঘর, বাড়ি, বিদ্যুৎ, গাছ। গোটা উপজেলাতে অন্তত দেড় শ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। অথচ সরকার থেকে আজও কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি তিগ্রস্তরা। গত ২০ মে চৌগাছার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের উৎপত্তি স্থল, সংগত কারণে উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এবার যেন সেটি ছিল ভিন্ন। উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা, সাতক্ষীরা,বাগেরহাট, ভোলা, ঝালকাটি এলাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তার থেকে কোন অংশে কম নেই সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছা। ঘূর্ণিঝড়ের সেই মৃত্যু মিছিলে শরিক হয়েছেন মা, মেয়ে। ভেঙেছে শ শ ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গাছ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, প্রাণিসম্পদ সব মিলিয়ে ১৪৮ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৪৬ কেটি ৬ লাখ, ৩০ হাজার টাকা, প্রাণিসম্পদ অফিসে ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, বিদ্যুতের ক্ষতি ৬ কেটি টাকা, কাঁচা, আধা পাকা ঘরের ক্ষতি হয়েছে ৮৭ কোটি, মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ধর্মীয় উপসানালয়ের ক্ষতি হয়েছে ২৫ লাখ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ১৫ লাখ এবং জনস্বান্থ্য (স্যানিটেশনসহ অন্যান্য) ক্ষতি ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। উপজেলার বহু এলকার কৃষক আজও কষ্ট ও যন্ত্রণায় মাঠে তার ফসলের ক্ষতি পর্যন্ত দেখতে যাননি। এমনই এক কৃষক জগদীশপুর গ্রামের রোকনুজ্জামান। তিনি বলেন, ৮ বিঘা আম আর পেয়ারা ছিল ৩ বিঘা জমিতে। ঝড়ে যদি ক্ষতি না হতো তাহলে এখন আম ওঠা শুরু করতেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩শ মণ আম হওযার কথা, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া ১শ মণ পেয়ারার ক্ষতি হয়েছে। আম ও পেয়ারার এমন ক্ষতির কারণে ঝড়ের পর হতে ওই কৃষক আর মাঠের যাননি। পেটভরা গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেন। ভয়াবহ সেই ঝড়ে তার সব কলা গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। বসত বাড়ির ঘরের চালও সেদিন ঝড়ে উড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ পার হলেও অর্থ অভাবে তিনি ঘরের টিন আজও লাগাতে পারেননি। রোকনুজ্জামান, আব্দুল গনির মত হাজারও মানুষ ঝড়ের দুই সপ্তাহ পার হলেও ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। সরকার থেকে আজও কোন সহযোগিতা তারা পায়নি, পায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন কোন আশ^াস। বলা চলে চরম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ গুলো দিন পার করছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ঝড়ের পর পরই গোটা উপজেলাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটি খুব গুরুত্ব সহকারে নিরুপণ করা হয়। আমরা সব কিছু ঠিক করে জেলাতে প্রেরণ করেছি। জেলা থেকে পরবর্তীতে যে নিদের্শনা আসবে আমরা সে অনুযাায়ী কাজ করব বলে তিনি জানান।