হাঁটু পানিতে ঈদ জামাত নিয়ে বিতর্ক

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ খুলনার উপকূল কয়রায় ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের সময় হাঁটু পানিতে ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করেন ঐ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পানিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের পিছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ‌্য আছে কি না তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদক কথা বলেন পানির মধ্যে আদায়কৃত ঈদ জামাতের ইমাম সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আ.খ.ম. তমিজ উদ্দিনের সঙ্গে।
মাওলানা তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম ঈদের দিন ভোরে ভাটার সময় বাঁধ মেরামতের জন্য গ্রামের লোকজনকে উপস্থিত থাকতে আগে থেকেই আহ্বান জানান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেখানেই ঈদের জামাত আদায়ের কথা ছিল। সে মোতাবেক আশপাশের কয়েকটি গ্রামের পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক বাঁধে জড়ো হয়ে মেরামত কাজ শুরু করেন। ‘মেরামত করতে করতে বেলা সাড়ে ১০টার মতো বেজে যায়। তখন গ্রামের সব মসজিদেই ঈদের জামাত শেষ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া বাঁধ থেকে গ্রামের শুকনো জায়গায় পায়ে হেঁটে ফিরতে প্রায় দুঘণ্টা লেগে যায়। এছাড়া এত লোকের একত্রে জামাত আদায়ের কোনো জায়গাও ছিল না। গ্রামের উঁচু ভবন, স্কুল বা মসজিদে একত্রে এতো লোকের স্থান সংকুলান হতো না। যে কারণে বাধ্য হয়েই পানির মধ্যে জামাত আদায় করেছি।” তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধ এলাকায় মোট তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দুটি বাঁধের ওপরে। কিন্তু জায়গা না থাকায় একটি পানির মধ্যে আদায় করা হয়।’ শুধুমাত্র বাঁধ মেরামতের স্বার্থেই তারা বাধ্য হয়ে এখানে জামাত আদায় করেছেন- দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখানে অন্যকোনো উদ্দেশ্য ছিল না।’
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণে আসে কয়েক হাজার মানুষ। কাজ শেষ করে যখন নামাজে দাঁড়ানো হয়, ততক্ষণে জোয়ারের পানি হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ‘আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সকালে সবার জন্য ঈদের সেমাইয়ের ব‌্যবস্থা করি। দুপুরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি বা বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।” পানির মধ্যে ঈদ জামাত আদায়ের বিষয়ে খুলনা আলীয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মুফতী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় জামাত আদায় হয়ে গেছে। ওজরের ক্ষেত্রে শরীয়তে কোনো সমস্যা নেই।’ এ বিষয়ে কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, ‘ঝড়ে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকেই গ্রামের লোকজন বাঁধ মেরামতে কাজ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনও তারা বাঁধ মেরামতের কাজ করবেন বলে জানতাম। তবে সেখানে পানির মধ্যে ঈদের জামাত আদায় করার বিষয়টি আগে থেকে জানতাম না। এ বিষয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কয়রা উপজেলায় ১১টি পয়েন্টে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ৮০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। ফলে সোমবার (২৫ মে) ঈদুল ফিতরের দিন ২নং কয়রা নদী ভাঙন পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েই পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করেন। এদিকে এ বিষয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের নির্দেশে মঙ্গলবার (২৬ মে) এ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিতে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেনকে প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া অপর দু’ সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি- সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির ও কয়রার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী।