কলারোয়ার আম রফতানি হচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক শ চাষি

0

কে.এম. আনিছুর রহমান,কলারোয়া (সাতক্ষীরা) ॥ কলারোয়ায় প্রান্তিক আম চাষিরা বিষমুক্ত আম রপ্তানির লক্ষ্যে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে,করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি বছর বিদেশে আম রপ্তানির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর । আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের দেশিয় বাজারে আম বিক্রির জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাদে, গুণে ও মানে বিখ্যাত কলারোয়ার আম ইউরোপের বাজারে সুনাম অর্জন করলেও তাতে কোনো লাভ নেই। রসালো আমের জন্য বিখ্যাত কলারোয়া উপজেলা। চলতি মৌসুমের ফলন অনেকটা কম। ক্ষতিগ্রস্ত শ শ আমচাষি। এর মধ্যে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস দুর্যোগ। সব মিলিয়ে জ্যৈষ্ঠের বাতাসে দুলছে আম চাষিদের দুঃস্বপ্ন।
মানুষের আয় নেই, তার ওপর আবার বাজারজাতকরণের সমস্যার কথা চিন্তা করে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন উপজেলা আম চাষিসহ ব্যবসায়ীরা। এ খাতের সঙ্গে জড়িত সংশিষ্টরা মনে করেন, রাজধানীসহ সারাদেশে সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ সম্ভব হলে লোকসান কমানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে সংশিষ্ট কর্তৃপ বলছে, অপরিপক্ক আম সরবরাহ বন্ধসহ চাষিদের সঙ্কট নিরসনে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। কলারোয়া উপজেলার সিংগা গ্রামের আম ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম। ১৬ লাখ টাকার আমের বাগান রয়েছে এই ব্যবসায়ীর। করোনা পরিস্থিতিতে আম বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এ বছর ১৬ লাখ টাকার আম বাগান কেনা রয়েছে। খরচ বাদেও পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে এমন আশা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর তিনি ঢাকায় আম বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। এই আমের ব্যবসা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো ব্যবসা নেই। বছর শেষে একবার আমের ব্যবসায় উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে আমাদের সংসার’। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর গুটি আম (কাঁচা আম) বিক্রি হয় ৪-৫ লাখ টাকার। এ বছর সেটিও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। দোকানপাট, হাট-বাজার বন্ধ, পরিবহন সমস্যা। এ ছাড়া আম ভাঙার শ্রমিকও সংকট। নানা কারণে এ বছর আম ব্যবসায়ীরা ব্যাপক তির সম্মুখীন হতে পারেন। তবে যদি সঠিকভাবে বাজারজাত করা যায় তবে তির হাত থেকে কিছুটা হলেও রা পাবে ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া অসাধু অনেক ব্যবসায়ীও রয়েছেন যারা অপরিপক্ক আম তিকর রাসায়নিক দ্রব্য বা কেমিকেল মিশিয়ে বাজারজাত করে থাকেন। একই গ্রামের অপর আম শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর আমের ফলন ভালো হয়নি। যেটুকু হয়েছে সেটুকু স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করতে হবে। গত বছর খুলনা ও ঢাকায় নিয়ে আম বিক্রি করেছিলাম। এ বছর হয়তো সেটি আর সম্ভব হবে না।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মহাসীন আলী জানান, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বিদেশে আম রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে আম রপ্তানি না হলেও দেশিয় বাজারে ভাল লাভে আম বিক্রয় করতে পারবে। তিনি আরও বলেন- চলতি মৌসুমে কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। মোট ২৬০০ ছোট-বড় বাগান রয়েছে। এ সব বাগান থেকে প্রায় ৪০০ মেট্রিক আম টন উৎপাদন হয়। এ থেকে ১০০ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানি করা হত। এরমধ্যে হিমসাগর ২০০ হেক্টর, ল্যাংড়া ২০০ হেক্টর আম্রপালি ১৫০হেক্টর। বাকি জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে। সাতীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতীরায় নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জেলার আমের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। নির্ধারিত দিনের আগে গাছ থেকে আম ভাঙা যাবে না মর্মে ব্যবসায়ী ও চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরিপক্ক আম কেমিকেল মিশিয়ে বাজারকরণের চেষ্টা করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।