যশোরে চিকিৎসক সেবিকাসহ আরও ১১ জন করোনায় আক্রান্ত

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে তিনজন চিকিৎসক, একজন সেবিকাসহ ১১ জন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯০ জন। আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ৪১ জন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী একের পর এক আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে ব্যাপক চিকিৎসা সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন তার প্রতীক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীগণ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ভেতর থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
যশোরের সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় কোভিড-১৯ সংক্রমণে ১৭টি পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ১শ’ ৩৯টি নমুনা পরীক্ষার। ১৭টি পজেটিভ রিপোর্টের ভেতর ১১টি ছিল কোভিড-১৯ সংক্রমণে নতুন আক্রান্ত। বাকি ৬টি ছিল ফলোআপ রিপোর্টে পজেটিভ। যে ১১ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সকলেরই যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আক্রান্তদের ভেতর ৩ জন চিকিৎসক ও ১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছেন। এদের মধ্যে যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের একজন গাইনি চিকিৎসক, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক রয়েছেন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছেন একজন। আক্রান্ত অন্যরা সাধারণ মানুষ। আক্রান্তদের ভেতর যশোর সদর উপজেলার ৫ জন রয়েছেন। এছাড়া ১৭ জনের মধ্যে দু’জন চিকিৎসকসহ ৬ জনের ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ এসেছে। তাদের সকলকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন। আক্রান্তরা গত ১৩ মে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ওই তারিখে নমুনা দেয়া যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ বছর বয়সী এক অন্তঃসত্ত্বা নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বাড়ি যশোর শহরের মুড়লি বকচর এলাকায়। গত ১৩ মে তাকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসক সেবিকা সকলেই তাকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় গতকাল তাকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সচালক মোশাররফ হোসেন তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রবিউল ইসলাম (২) জানিয়েছেন, ওই নারীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল। বারবার ডিএনসি করেছে। এবার তিনি গর্ভধারণ করেছেন। তারপর করোনায় আকান্ত হয়েছেন। ভর্তি হওয়ার সময় তিনি তথ্য গোপন করেছেন। তার চিকিৎসা দেয়া কঠিন। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ডা. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা রোগী না জেনে যারা চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তারা সকলেই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। গাইনি ওয়ার্ডও পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এর আগে যে প্রসূতির সিজার করা হয়েছিল তাকে গত ৯ মে যে সেবিকা সেবা দিয়েছিলেন তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্ত ২১ জন পজেটিভ রোগীর ভেতর ওই সেবিকা হচ্ছেন একজন। তিনি ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে বারংবার ধর্না দিয়েও তিন ৯ মে থেকে ছুটি পাননি। পরে তার সহকর্মী এক সেবিকার সাথে প্রমাণ দেয়ার পর সত্যতা যাচাই করে ১৪ মে হতে ২২ মে তাকে ছুটি দেয়া হয় তাও ডে অপ হিসেবে। এর ভেতর দীর্ঘ ৫ দিন হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক, সহকারী পরিচালক, আরএমওসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যান এবং ছুটির জন্য দেন দরবার করেন। ওয়ার্ডেও কাজ করেন তিনি। এর আগে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত একজন কার্ডিওলজিষ্ট ুচিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংস্পর্শে যান। ফলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত চিকিৎসক কর্মচারীরা সর্বত্র কাজের প্রয়োজনে চলাফেরা করেন। এ নিয়ে সকলেই করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালের অবস্থা কি হবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, লকডাউনে যাওয়া ঠিক হবে না। জীবাণুনাশক স্প্রে করেই হাসপাতাল চালাতে হবে। নইলে যশোরের মানুষ তো চিকিৎসা পাবে না।