যশোরে মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা বাজার স্থানান্তর নিয়ে

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ যশোরের বড়বাজারে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা শুধু প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে টাউন হল ময়দানে মাছ বিক্রি বন্ধ করেছেন তাই নয়, আড়তদার ও অন্যান্য বিক্রেতাদেরও (পাইকার) প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। তারা দলবদ্ধ হয়ে মাছবাজারে আড়তদার ও পাইকারদের মাছ কেনাবেচা করতে নিষেধ করছেন। বুধবার এ ঘটনায় মাছ বাজারের আড়তদাররা এক জরুরি সভায় বসে। এদিকে মাছবাজারের আড়তদাররা খুনের হুমকির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাবেচা করার জন্য জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা বাজার স্থানান্তর করে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে বড়বাজারের মাছবাজার টাউন হল ময়দানে এবং কাঁচাবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহে বসানো হয়। হঠাৎ করে এখানে নানা অসুবিধার কথা উল্লেখ করে পাইকাররা (খুচরা মাছ ব্যাবসায়ী) গত ১১ মে থেকে মাছ বিক্রি বন্ধ করে দেন। তারা আবার বড়বাজার মাছ বাজারে ফিরে যেতে চান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন তাদের অযৌক্তিক এই দাবির প্রতি কর্ণপাত না করায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
বুধবার (১৩ মে) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অন্তত ৩০-৪০ জন পাইকার বড়বাজার মাছ বাজারে আড়তদারদের ওপর চড়াও হন। ‘মেসার্স কুয়াকাটা মৎস্য ফিশ সাপ্লায়ার্স’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী নূর আলমকে পাইকারি মাছ বিক্রি করতে দেখে তাকে মারতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে খুচরা মাছ ব্যবসায়ী জনি, সাদ্দাম, আজগর, জাকির, কালুসহ ৩০-৪০ জন আড়তদার নুর আলমকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যান। এদের অধিকাংশেরই বাড়ি শহরের খালধার রোডের পাশে নিকারিপাড়ায়। এ ঘটনায় আড়তদার নুর আলম কোতয়ালি থানায় জিডি করতে গেলে তাকে থানা থেকে বলা হয় আগামীকাল আপনাদের মিটিং আছে, তারপরে আসেন। নুর আলম বুধবার জিডি না করে ফিরে আসেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। নুর আলমকে হত্যার হুমকির সত্যতা স্বীকার করেছেন পাশের আড়ত মেঘনা ফিশের স্বত্বাধিকারী ছোট শহিদুল, তিতাস ফিশের স্বত্বাধিকারী গোলাম তাহের টগর প্রমুখ। তাদের মারমুখি হুমকিতে অনেক জেলে ও ঘের মালিকরা ভয়ে বাজার থেকে তাদের মাছ অন্যত্র নিয়ে চলে যান বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এর আগে গত ১১ মে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা টাউন হল ময়দান থেকে চাঁচড়ার হরিচানের মাছ ছিনিয়ে নিয়ে রেল বাজারে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হরিচান ওই দিন মাছ বাজারের তিতাস ফিশ আড়ত থেকে ২০ কেজি শিং মাছ কিনে টাউন হল ময়দানে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে মাছ বিক্রেতা হরিচান নিজে ঘটনা অবহিত করেন। তিনি বলেন, ওই সময় জুয়েল ও আমির আলী তার মাছ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। গতকাল বুধবার সকালে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পর মাছ বাজারের আড়তদাররা তাৎক্ষণিক এক জরুরি সভা ডাকে। সভায় মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় উচ্ছৃঙ্খল বেপরোয়া ওই পাইকারদের কাছে কোনো আড়তদার মাছ বিক্রি করবে না। অবশ্য সভায় এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানানো হয়। বড়বাজার মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক ও সমমনা ফিশের স্বত্বাধিকারী জাকির বিশ^াসের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন তিতাস ফিশের স্বত্বাধিকারী গোলাম তাহের টগর, সোনালী ফিশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান লাবু, কর্ণফুলি ফিশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান তপু, পদ্মা ফিশের স্বত্বাধিকারী সোহেল আলম, কুয়াকাটা ফিশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী নুর আলম, মেঘনা ফিশের স্বত্বাধিকারী ছোট শহিদুল, আলিফ ফিশের স্বত্বাধিকারী কাজী হাফিজুর রহমান আজাদ,একতা ফিশের স্বত্বাধিকারী গোপাল বিশ^াস, বাঁকড়া ফিশের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম শিমুল, গৌরব ফিশের স্বত্বাধিকারী গৌতম দাস প্রমুখ। এদিকে, বড়বাজার খুচরা মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলম শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, টাউন হল ময়দানে তাদের সমস্যার কথা আড়তদারদের জানিয়েছেন। কিন্তু আড়তদাররা তাদের জানিয়ে দিয়েছেন আপনাদের সাথে আমরা নেই, আপনার যা পারেন করেন। তখন সমিতির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন মাছ বাজার থেকে তারা আর মাছ কিনবেন না। এ সময় তিনি বাজারে অরাজকতার কথা অস্বীকার করেন।