চৌগাছায় ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তরমুজ ॥ বাজারদর ভাল তাই চাষি খুশি

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে মৌসুমী রসালো ফল তরমুজের। ২/৩ বছর আগেও উপজেলাতে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক বলা চলে শখ করে তরমুজ চাষ করলেও বর্তমানে দু’টি ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে তরমুজের। বাজারে যথেষ্ঠ চাহিদা ও দাম ভাল থাকায় তরমুজ চাষিরা এ বছর বেশ লাভবান হবেন বলে জানা গেছে। উপজেলার পাতিবিলা ও হাকিমপুর পাশাপাশি দু’টি ইউনিয়ন। ইউনিয়ন দুইটির মাঝ বরাবর অর্থাৎ পাতিবিলিা, দেবিপুর, হয়াতপুর ও নিয়ামপুর গ্রামের বেশ কিছু এলাকা জুড়ে বালুময় মাঠ। এক সময় ওই বালু জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয়নি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ অঞ্চলের কৃষকরা নতুন নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে এনেছেন। এখানকার চাষিদের তেমনি একটি সাফল্য হল তরমুজ চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার দু’টি ইউনিয়নে (হাকিমপুর ও পাতিবিলা) ৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই চাষ দ্বিগুন হয়েছে। তরমুজ চাষে খরচ কম, বাজারে চাহিদা ভাল তাই কৃষক দিন দিন তরমুজ চাষে ঝুকে পড়ছেন। গতকাল সরেজমিন উপজেলার তরমুজের মাঠ বলে পরিচিত হয়াতপুর, দেবিপুর, নিয়ামতপুর গ্রামের মাঠে ঘুরে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। এই সব মাঠে বিঘার পর বিঘা জমিতে কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। অনেক চাষি আবার সাথী ফসল হিসেবে পেয়ারার ক্ষেতে লাগিয়েছেন তরমুজ। বাজার দর ভাল থাকায় এক জমিতে পেয়ারা ও তরমুজ চাষে কৃষক বেশ সাফল্য পেয়েছেন।
সিঙ্গাপুর থেকে গত ২ বছর আগে দেশে এসেছেন আব্দুস সালাম। সে উপজেলার হয়াতপুর গ্রামের কৃষক আবু তাহেরের ছেলে। বিদেশ থেকে দেশে এসে আব্দুস সালাম পিতার জামি জায়গা দেখাশুনা করেন। প্রতিবছর নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করে তিনি বেশ সাফল্যও পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি পেয়ারা, পেঁপে, বেগুন, পুইশাকসহ নানা ধরনে সবজির পাশাপাশি ১ বিঘা জমিতে গঙ্গা জাতের (স্থানীয় নাম) তরমুজ চাষ করেছেন। অন্যান্য ফসলের মত তরমুজে তিনি ইতোমধ্যে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। কৃষক আব্দুস সালাম জানান, ১ বিঘা জমিতে তিনি পেঁয়ারার চাষ করেছেন। ওই জমিতে বাড়তি আয়ের জন্য চাষ করেছেন তরমুজের। পেঁয়ারা গাছ বেড়ে উঠার আগেই তিনি তরমুজে ভাল একটি ফলন পেয়ে যাবেন। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ১ বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করা যায়। পক্ষান্তরে ১ বিঘাতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তরমুজ একটি জনপ্রিয় ফল, বাজারে এর যথেষ্ঠ চাহিদাও রয়েছে, সেকারনে কৃষক দিনদিন তরমুজ চাষে ঝুকে পড়ছেন বলে অনেকে মনে করছেন। কৃষক আব্দুস সালামের মত ওই মাঠে জসিম উদ্দিন ১ বিঘা, লাভলু হোসেন দেড় বিঘা, কবির হোসেন আড়াই বিঘা, সহিদুল ইসলাম দেড় বিঘা, সুন্নোত মিয়া সাড়ে ৩ বিঘা, ইউনুচ আলী ২৫ কাটা, হাসানুর রহমান দেড় বিঘা, পান্নু মিয়া দেড় বিঘা জমিতে তমুজের চাষ করেছেন।  কৃষকরা জানান, সম্প্রতি শিলা বৃষ্টিতে তরমুজের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এই দূর্যোগ না হলে তারা আরও লাভবান হতেন। তারপরও আর যদি কোন দূর্যোগ না হয় তাহলে তরমুজ চাষিরা এ বছর অনেক লাভবান হবেন বলে কৃষকরা মনে করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন জানান, উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের কৃষকরা তরমুজ চাষ করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা মুলত বিগ ফ্যামেলী জাতের তরমুজ চাষ করছেন। বাজারে তরমুজের চাহিদা ভাল থাকায় কৃষকের কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ চাষ। উপজেলা কৃষি অফিস সকল চাষিদের নতুন নতুন চাষে মনোনীবেশ করাতে যথাযথ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।