কাঁচা পাট সংকটের শঙ্কায় ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল

0

খুলনা প্রতিনিধি॥মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পর্যাপ্ত কাঁচা পাট ক্রয় ও মজুদ করতে পারেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকরা পাটখাতে অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরিসহ ১১ দফা নিয়ে আন্দোলন করলেও কোন লাভ হয়নি। এর ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে এক মাস পাটকল বন্ধ ছিল। এখন কল চালু করা হলে মিলগুলোতে মজুদ পাটের সংকট পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। খুলনার স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিলে পাটের সংকট এখন প্রকট, প্রতিদিন পাট সংগ্রহ করে উৎপাদন চালু রাখা হচ্ছে। তবে অন্যান্য পাটকলে একমাস উৎপাদন চালিয়ে রাখার মতো পাট মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘করোনায় বন্ধ থাকার কারণে মিলগুলো যথাযথভাবে পাট কিনতে পারনি। এ কারণে এখন মিলগুলো চালু হলেও প্রয়োজনীয় উৎপাদন করতে পারছে না। কাঁচা পাট সংকটের কারণে বর্তমানে মিলগুলোর উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।’
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রতিদিন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮০ মেট্রিক টন। দৈনিক কার্পেটিং জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন, ক্রিসেন্ট জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, দৌলতপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ১১ মেট্রিক টন, ইস্টার্ন জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৩৪ মেট্রিক টন, যশোর জুট ইন্ডািস্ট্রিজে (জেজেআই) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন, খালিশপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ দশমিক ৫৪ মেট্রিক টন, স্টার জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন, আলীম জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সময় মতো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে না পারার কারণে মিলগুলোর উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।’ প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ‘পাটকলগুলো আর্থিক সংকটে থাকায় শ্রমিকরা কাজ করেও নিয়মিত মজুরি পাচ্ছেন না। আর এ কারণেই আন্দোলন করতে হয়েছে। শ্রমিকরা কেবল মজুরি নিয়েই আন্দোলন করে না। পাটখাতে অর্থ বরাদ্দ নিয়েও আন্দোলন করে। কিন্তু সুফল মিলছে না।’
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ নেতা মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঝুঁকি থাকার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এখন কাঁচা পাটের জোগান ঠিক রাখাটা জরুরি।’ প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচা পাট ক্রয়ের বিষয়টি চিন্তায় নিতে হয়েছে। কারণ কাঁচা পাট না থাকলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন না। মিলে সপ্তাহখানেকের পাট মজুদ আছে। তাই কাঁচা পাট কেনার ওপর জোর দিতে হচ্ছে।’ স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান রইজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, করোনার প্রভাবের মধ্যে মিল বন্ধ থাকায় পাট মজুদের বিষয়টি ভাবনায় ছিল না। এখন প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট ক্রয় করার মাধ্যমে মিলে উৎপাদন চালু রাখা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাট মৌসুমে মিলগুলো ভালমানের যে পাট ২১শ টাকা দরে ক্রয় করতো তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাওয়া যাচ্ছে ক্রস পাট। তা মৌসুমে ১৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে পাট রফতানি বন্ধ। তাই পাটের দর ১৮শ টাকায় নেমে এসেছে। মিলগুলো এখন এই পাটই ক্রয় করছে। যা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে রাখা যাবে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান খান মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, তার মিলে জুন পর্যন্ত উৎপাদন চালিয়ে রাখার মতো পাট মজুদ আছে। এখন আরও কিছু পাট কেনা হবে, যা দিয়ে আগামী জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন চলতে পারে। এরপর নতুন পাট এসে যাবে।