চৌগাছার কৃষকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলাচাষ

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে কলাচাষ। অন্যান্য ফসলের মত কলাচাষে পরিশ্রম কম, খরচও কম আবার লাভ বেশি, সে কারনে এ অঞ্চলের কৃষকরা কলাচাষে ঝুকে পড়ছেন। চৌগাছায় উৎপাদিত কলা এলাকার চহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনটিই জানালেন কৃষকরা।
এমন এক সময় ছিলো চৌগাছার মাটিতে শুধু দুটি ফসল হতো। বছরের বাকি সময় কৃষক অলস সময় পার করেছেন। কিন্তু সেই সময় এখন আর নেই, বলাচলে কৃষক এখন দোম ফেলার সময় টুকু পাইনা। নতুন নতুন উদ্ভাবনে কৃষিতে ঘটেছে অভাবনীয় সাফল্য। তেমনি একটি সাফল্য নিয়ে এসেছেন চৌগাছার কৃষকরা। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের মাঠে এখন বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের কলা। আর কলাচাষে অভাবনীয সাফল্যও পেয়েছেন চাষিরা, তাইতো প্রতি বছরই বাড়ছে কলাচাষ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চৌগাছায় প্রায় ৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হেক্টর বেশি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকায় কমবেশি কলাচাষ হলেও নারায়নপুর ও হাকিমপুর ইউনিয়নে ব্যাপক ভাব চাষ হচ্ছে নানা জাতের কলা। এই ইউনিয়ন দু’টির অধিকাংশ মাঠে যে দিকে চোখ যায় শুধুই দেখা মেলে কলার ক্ষেত।
গতকাল উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বড়খানপুর, গুয়াতলি, নারায়নপুর, চাঁদপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠে যেয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় কথা হয় গুয়াতলি গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে কৃষক শেখ খোরশেদ আলীর সাথে। তিনি জানান, কলা একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের মত কলাচাষে এতো পরিশ্রম করতে হয়না এমনকি খরচও বহুলাংশে কম। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না আসে তাহলে কলাচাষ কৃষককে হতাশ করেনা। চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে কলাচাষ করেছেন। জমি তৈরী ও চারা রোপন তার প্রথম খরচ। জমিতে কোন রাসায়নিক সার দেয়া লাগে না, শুধু জৈব সারই যথেষ্ট, যার কারনে বড় একটি খরচের হাত থেকে কৃষক রক্ষা পাচ্ছে। ভাইরাস বা ঝড় না হলে ১ বিঘা জমি থেকে কৃষক ৮০ হাজার হতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করতে পারেন। অথচ সব মিলিয়ে কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কৃষক শেখ খোরশেদ আলীর মত ওই মাঠে গোলাম মোস্তফা ৪ বিঘা, সবুর উদ্দিন ৮ বিঘা, সাইফুল ইসলাম ৩ বিঘা, আলা উদ্দিন ৪ বিঘা, সুলতান আহমেদ ৫ বিঘা, মশিয়ার রহমান ১২ বিঘা, আমির হামজা ১০ বিঘা জমিতে কলাচাষ করেছেন। তাদের চাষকৃত কলার মধ্যে দুধ শরফি, ২২ ছাড়া, চাপা শরফি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সাগর কলাসহ অনেকে কাচা কলারও চাষ করেছেন।
কৃষকরা জানান, অন্য ফসলের মত কলায় পোকামাকড়ের উপদ্রুপ তুলনামূরক কম। সার কীটনাশকও লাগেনা বললেই চলে। চারা রোপনের এক বছর পরই কলা বিক্রি করা যায়। বাজারে কলার চাহিদাও যথেষ্ট পরিমান। ১ কাঁদি কলা সর্বনিন্ম ৫শ আর সর্বোচ্চ ৮শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। কলা বিক্রির সময় হলে ক্রেতা (ব্যাপারী) মাঠে চলে আসে এবং ন্যায্য দাম দিয়ে কিনে যায়, সেকারনে এ অঞ্চলের কৃষকরা কলাচাষে ঝুকে পড়ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রউচউদ্দিন বলেন, কলা একটি লাভজনক ফসল। বাজারদও ভাল থাকায় চাষিরা দিনদিন কলাচাষের দিকে ঝুকছেন। উপজেলা কৃষি অফিস আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে কৃষককে যথাযথ সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।