করোনায় মানবিক বিপর্যয়ে যশোরের কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরিস্থিতির কারণে শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন যশোরের পরিবহন শ্রমিকরা। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাসসহ সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার অস্বচ্ছল শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের গোটা পরিবারে নেমে এসেছে এক মানবিক বিপর্যয়। এমন সংকটে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, খোঁজ খবর পর্যন্ত নিচ্ছেন না পরিবহন মালিকরা। ফলে সরকারি-বেসরকারি সাহায্যর অপেক্ষা করে দিন পার করছেন তারা।
করোনাভাইরাস রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সারাদেশে গণপরিবহনসহ সবধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। এর কারণে যশোর পরিবহন সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠনের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা এখন পুরো নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমিকরা এখন সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণের জন্য যেখানে সেখানে হাত পেতেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে পরিবহন শ্রমিকদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠন তিনটি হলো-যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন-২২৭, জেলা ট্র্যাক-ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন-৯১৮ ও জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন-৪৬২। এই তিনটি সংগঠনের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। এসব শ্রমিক সবাই অস্বচ্ছল-হতদরিদ্র। পরিবহনে চাকরি করে প্রতিদিনের আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার-জীবন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব শ্রমিক এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। দু মাস ধরে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় তাদের পরিবারে এখন বিরাজ করছে স্থবিরতা। এ অবস্থায় তারা পাশে পাচ্ছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের।
শামীম গাজী নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, গাড়ির চাকা না ঘুরলে যেখানে আমাদের আয় রোজগার থাকেনা, সেখানে দিনের পর দিন গাড়ি বন্ধ থাকায় আমরা বেঁচে থাকবো কী করে? তিনি বলেন, সাত সদস্যের সংসার আমার। এখন ঘরে কিছু নেই। হাত পাতলেও মানুষ কিছু দিতে পারছে না। এ অবস্থায় মালিকরা যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন তাও কেউ আসছেন না। একই কথা বলেন, রাশেদ নামে আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা বেকার বসে আছি। সমিতির পক্ষ থেকে যশোর পৌরসভার দেয়া সামান্য কিছু অনুদান দেয়া হয়েছে। অথচ এতবড় একটি সংগঠনের নেতারা আমাদের এই দুর্দিনে কিছুই করছেন না। তিনি বলেন, কয়েকজন পরিবহন মালিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। দিদার হোসেন নামে আরেক পরিবহন শ্রমিক বলেন, আমরা শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও মালিকদের জন্য শুধু উৎসর্গ করে গেলাম। কিন্তু তারা আমাদের দুর্দিনে কিছুই করছেন না। আজ যশোরে শত শত পরিবহন শ্রমিক আটকে রয়েছেন। টাকার অভাবে তারা নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে অনেক অস্বচ্ছল শ্রমিক অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে গেলে করার কিছুই থাকবে না।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু বলেন, শ্রমিকদের দুর্দশার কথা আমি জানি। কিন্তু আমরা এখন পরিস্থিতির শিকার। বিপুল সংখ্যক এ শ্রমিকের জন্য আমরা নিজেরা যেমন কিছু করতে পারছিনা তেমনি কোথা থেকে কিছু এনেও দিতে পারছিনা। তিনি বলেন, সম্প্রতি পৌরসভা কর্তৃক এক হাজার শ্রমিককে অনুদান দেয়া হয়েছে। আরও অনুদান আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাতে সরকারি অনুদান ও প্রণোদনার আওতায় আসেন সে জন্য আমরা কয়েক দফা যশোরের জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
সংগঠনটির সহসভাপতি আবু হাসান বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য আমাদের যে ফান্ড আছে তা শুধুমাত্র মৃত্যুবরণকারী, অবসরপ্রাপ্তদের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। এর বাইরে কোনো অর্থ ব্যয় করতে গেলে সংগঠনের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামত প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের শাসনামলে গত তিন বছরে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের কল্যাণে দুই কোটি টাকা ব্যয় করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কাছে শ্রমিকদের পূনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।