শত্রুতার বলি তরমুজ খেত

0

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি॥ সবুজ তরতাজা গাছগুলোয় ঝুলে ছিল শত শত কালো তরমুজ (খরমুজ)। বেশ বড় হয়েছিল সেগুলো। কিছু দিন পরেই সেগুলো বিক্রির উপযুক্ত হতো। এসব তরমুজ বেচে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আশায় ছিলেন দরিদ্র কৃষক আমিরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে সেই তরমুজ খেতের দিকে তাকাতেই সব স্বপ্ন ভেঙে যায় আমিরুল ইসলামের। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তরমুজের গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। তার ৯২ শতক জমির তরমুজ গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের। ওই গ্রামের মৃত খোদাবক্স খাঁর চার ছেলের মধ্যে ছোট আমিরুল ইসলাম ওরফে মিঠু খাঁ (৩৮)। তিনি জানান, প্রায় ৫ বছর হয়েছে তারা সবাই পৃথক সংসার করছেন। তিনি মাঠে চাষযোগ্য ৪ বিঘা জমি পেয়েছেন। এই জমি চাষ করে কোনো রকমে সংসার চালান। বেশি আয়ের আশায় এবার ৯২ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেন আমিরুল। এতে তার খরচ হয়েছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। আমিরুল জানান, তার খেতে তরমুজের গাছগুলো খুব ভালো হয়েছিল। তরমুজও ধরেছিল অনেক। ১৫ দিন পরেই তার খেতের তরমুজ বিক্রি করা যেত। বাজারে বর্তমানে এই তরমুজের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসেবে তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন।
আমিরুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালেও তিনি তরমুজ খেত দেখতে গিয়েছিলেন। তখন বুঝতে পারেননি তার খেতের গাছগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে আবার খেতে গেলে দেখতে পান সবুজ গাছগুলো শুকিয়ে গেছে। গাছের গোড়ায় হাত দিয়ে দেখতে পান সব গাছ কেটে দেওয়া হয়েছে। আমিরুল জানান, তরমুজ চাষ করতে গিয়ে তার এখনো লক্ষাধিক টাকা ঋণ আছে। গাছে থাকা তরমুজগুলো গ্রামের লোকজন বাড়িতে নিয়ে গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এখন কীভাবে দেনা পরিশোধ করবেন সেটা ভেবে পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, একটি রাস্তায় মাটি ফেলা নিয়ে গ্রামের ইনছার আলীর সঙ্গে আমিরুলের বড় ভাই তিজারত আলী খাঁর তিন মাস থেকে দ্বন্দ্ব চলছে। তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। মাঝে মধ্যেই উভয় পরিবারের মধ্যে ছোট-বড় বিবাদ লাগে। ধারণা করা হচ্ছে, বড় ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতার জের ধরে ছোট ভাই আমিরুলের ফসলের ক্ষতি করেছে প্রতিপক্ষ। আমিরুল জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার দুই ভাতিজা ইনছার আলীর তিন ছেলেকে তরমুজ খেতের মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা ফসলের ক্ষতি করতে সেখানে গিয়েছিল। উপযুক্ত বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমিরুল ইসলাম। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তারা কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে এ ধরনের একটি ঘটনার কথা শুনেছেন, যা স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।