দুই জেলার ঠেলাঠেলির পর করোনা আক্রান্ত দম্পতির ঠাঁই হলো কুষ্টিয়ার আইসোলেশন

0

এস আর সেলিম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)॥ রাজধানী ঢাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক দম্পতি। তাদের নিয়ে ঘটে গেছে নাটকীয় ঘটনা। ঢাকা থেকে আসার পথে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হন তারা। এখান থেকেই নাটকীয়তার সূত্রপাত ঘটে। অবশেষে শুক্রবার রাতে তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর আগে দুই জেলার (রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া) কর্মকর্তারা এই দম্পতিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। শুরু হয় ঠেলাঠেলি। দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির পর দৌলতপুর আসনের এমপির হস্তক্ষেপে পালিয়ে আসা করোনা আক্রান্ত এই দম্পতির ঠাঁই হয় নিজ জেলা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। আক্রান্তরা হলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার তফিকুল ইসলাম (৩১) ও তার স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৫)। তাদের সাথে রয়েছে একমাত্র সন্তান ফাতেমা (৫)। তফিকুল ফিলিপনগর গ্রামের ভ্যাগল মালিথার ছেলে।
জানা গেছে, তফিকুল ইসলাম রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় থাকতেন। তিনি সেখানে ডা. ওমর ফারুক নামে এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। তাদের স্বামী-স্ত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হওয়ায় শুক্রবার সকালে তারা ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। ভেঙে ভেঙে এসে বিকেলের দিকে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের তথ্যের ভিত্তিতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রতন ক্লিনিকের সামনে একটি ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এখান থেকেই নাটকীয়তা ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে তাদের রাখা না রাখা নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। রাজবাড়ীতে তাদের রাখতে অসম্মতি জানানো হয়। এদিকে কুষ্টিয়াতেও তাদের প্রবেশের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়। দুই জেলার মধ্যে ঠেলাঠেলির একপর্যায়ে তাদের ঢাকায় ফেরত পাঠানোরও প্রস্তাব উঠে আসে। তবে তারা ঢাকা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে উভয় জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলতে থাকে। শেষমেষ কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশার হস্তক্ষেপে তাদেরকে শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয়। আক্রান্ত তফিকুল ইসলাম জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে টেস্টে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে তাদের দুজনের পজিটিভ রেজাল্ট আসে। তবে তাদের মেয়ের রেজাল্ট আসে নেগেটিভ। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে। ঢাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা পাবো কিনা এবং মেয়ের দেখাশোনার কথা চিন্তা করে আমরা নিজ এলাকা কুষ্টিয়ার উদ্দেশে চলে আসি।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এই দম্পতি পালিয়ে কুষ্টিয়া আসার পথে নানা রকম ঝামেলায় পড়েন। খবর পেয়ে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে রাজবাড়ি থেকে তাদেরকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে এসেছি। ঢাকা ফেরত করোনায় আক্রান্ত এই দম্পতিকে রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। বুধবার স্বামী এবং পরেরদিন বৃহস্পতিবার স্ত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনা রিপোর্ট পজিটিভের বিষয়টি তাদের নিশ্চিত করা হয়। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল হঠাৎ করে তফিকুল ইসলামের স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হন। ওষুধ খাওয়ার পর তিনদিনের মাথায় জ্বর ভালো হয় যায়। শুধু কাশি থেকে যায়। স্ত্রীর জ্বর ভালো হয়ে গেলে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। দুদিনের মধ্যে তার জ্বরও ভালো হয়ে যায়। দুজনের (স্বামী-স্ত্রী) জ্বর হওয়ার বিষয়টি তফিকুল তার গাড়ির মালিক সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুককে জানালে তিনি তাদের করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় আক্রান্ত দুই রোগীকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রতন ক্লিনিকের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। একাধিক সূত্র জানায়, আক্রান্ত দুজনকে রাজবাড়ীতে রাখতে অসম্মতি জানান সেখানকার প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কুষ্টিয়াতেও ঢুকতে না দিতে অনড় অবস্থান নেন এ জেলার কর্মকর্তারা। এ নিয়ে দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে ঠেলাঠেলি চলতে থাকে। তাদেরকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোরও প্রস্তাব করা হয়। শুক্রবার বিকেল থেকে অন্তত দুই তিন ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় এ নিয়ে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন মোবাইল ফোনে আলোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. ক. ম সরওয়ার জাহান বাদশার বিশেষ অনুরোধে মানবিক দিক বিবেচনায় এনে আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রীকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয়।