চৌগাছায় ধান ক্ষেত ব্লাস্ট ও মাজরা পোকার আক্রমণ, বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা কৃষকের

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় ধানে সোনালী রং উঠতে না উঠতে ক্ষেতে ব্লাস্ট ও মাজরা পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকদের মুখের হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আর কদিন পরেই কৃষকের ঘরে উঠবে সোনালি ধান। এরই মধ্যে উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের মুখ মলিন হয়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বোরো ধান ক্ষেত মাজরা ও ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ধানের ফলন অনেক কম হবে তাই প্রান্তিক কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ক্রমেই মহামারি আকার ধারণ করছে। এদিকে কৃষি প্রধান দেশের কৃষকের সোনালী স্বপ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে মাজরাপোকা ও ব্লাস্ট রোগে।
কৃষি অফিসের দাবি, করোনার মধ্যেও আমরা মাঠে মাঠে কৃষদের ক্ষেতে ছুটছি। তাদেরকে জমিতে মাজরা ও ব্লাস্ট প্রতিরোধক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকে ইতোমধ্যে আমাদের পরামর্শে প্রতিষেধক ব্যবহার করায় মাজরা ও ব্লাস্ট অনেক কমে গেছে। তবে যারা সময়মত ওষুধ ব্যবহার করেনি ক্ষেতে পাখি বসার জন্য ডাল পুতে দেয়নি তাদের ক্ষেতে হালকা ব্লাস্ট ও মাজরা দেখা দিয়েছে। যা ত্রখন নিয়ন্ত্রণে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে, উপজেলার চাঁদপাড়া, বন্দুলীতলা, হাজরাখানা, আন্দুলীয়া, মৎসরাঙ্গা, সিংহঝুলী, রঘুনাথপুর, পাশাপোল, সলুয়া, বাঘারদাড়ী, স্বরুপদহ, রামকৃষ্ণপুর, পুড়াপাড়া, খড়িঞ্চা, গরীবপুর, হুদাফতেপুর গেলে চোখে পড়ে ধান ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। ধানগাছের মাঝামাঝি স্থান থেকে শীষ পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, ধান পেকে গেছে। কৃষকরা বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ¯েপ্র করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।
উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক আবু তৈয়ব বলেন, ‘এ বছর ৯ বিঘা জমিতে জিরামনি ধান চাষ করেছি। ধানের কেবল শীষ বেরিয়েছে। ধান ক্ষেতে মাজরার আক্রমণ ঠেকাতে স্প্রে করলে পোকা কমলেও আবার ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। অনেকের ক্ষেতে মাজরা ও ব্লাস্ট দুটোই সমান ভাবে আক্রমণ করেছে। আন্দারকোটা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ, হানেফ আলী, নুরুন নŸী, মাহাবুর আলী ও আশকার আলী বলেন, আমাদের মাঠে ধানের রোগ মহামারি আকার ধারণ না করলেও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। তারা বলেন, অনেকের ক্ষেতের অবস্থা খুব খারাপ। যেটা পাকার মতো হচ্ছে, সেটা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া আশপাশের মাঠেও জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক বাজা মিয়া বলেন, মাজরাপোকা ও ব্লাস্ট রোগে ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, ধান পেকে গেছে। ¯েপ্র করেছি কাজ হচ্ছে না। এই গ্রামের কৃষক আব্দুস শুকুর বলেন, প্রথমে দু এক খন্ড জমিতে ছড়িয়েছিল, এখন পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। আমার নিজের ৬ বিঘা ধানেই এ রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এর প্রতিকারে আমাদের কি করতে হবে এমন পরামর্শ দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের কোনো লোক মাঠে দেখা যায়নি। আমরা প্রতিষেধক ওষুধ স্প্রে করলেও কাজ হচ্ছে না। উপজেলার হুদাফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আল নুমান বলেন, এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। আমার ধানে মাজরা ও ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। মহরম আলী নামে একজন আমাদের এলাকায় দায়িত্বে আছেন শুনি, তাকে ৫/৬ মাসের মধ্যে এ এলাকায় দেখা যায়নি। একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,এ এলাকায় দায়িত্বে যে আছে তার নামও কোনোদিন শুনিনি। নারায়ণপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার বলেন, কিছু জমির বোরো ধানে ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ৪-৫ দিন আগে হালকা ঝড়ে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ওষুধ ¯েপ্র করতে বলছি। বৃহস্পতিবারও আমি বিভিন্ন মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৭ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সব মিলিয়ে কিছু জমিতে মাজরা ও ব্লাস্ট দেখা দিয়েছিল। ¯েপ্র করার পর সেটা এখন নিয়ন্ত্রণে।