করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের গবেষণাগারে!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বন্যপ্রাণি বিক্রির কোন মার্কেট থেকে নয়, করোনা ভাইরাসের বিস্তার লাভ করেছে চীনের গবেষণাগার বা ল্যাবরেটরি থেকে। এ বিষয়টি আবিষ্কারের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম অনলাইন সিএনএন। তবে সূত্রগুলো এটা জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের। এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত করে কিছু বলা যাবে না। তদন্তকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছেন। তারা করোনা ভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে যতগুলো সম্ভাব্য উপায় তারা অবলম্বন করছেন তার মধ্যে ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া একটি।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে এই ভাইরাস মহামারি সৃষ্টি করে সারা বিশে^ লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ করছে। সিএনএন লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না, চীনের জীবাণু অস্ত্রের গবেষণার সঙ্গে এই ভাইরাসের যোগসূত্র আছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে অনেক থিওরি তা তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছে গোয়েন্দা সম্প্রদায়। একটি গোয়েন্দা সূত্রের মতে, উচ্চ পর্যায়ের কোনো ঘটনার সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে। এমন তত্ত্বকে সামনে ঠেলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেশনাল কিছু রিপাবলিকান। করোনা মহামারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে মোকাবিলা করছেন এতে তার অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনার মোড় ঘুড়িয়ে দেয়ার জন্য বেশ তৎপর এইসব রিপাবলিকান।
অনুসন্ধান নিয়ে সরকার যে বিশ্লেষণ করছে সে সম্পর্কে ভাল জানেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, একটি থিওরি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এটা তদন্ত করছেন যে, করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে এবং দুর্ঘটনাবশত তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য সূত্রগুলো সিএনএনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এই তত্ত্ব প্রতিস্থাপনে সক্ষম হন নি। তবে তারা এটা বুঝার চেষ্টা করছেন, ওই ল্যাবরেটরির ভিতর কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কোনো দুর্ঘটনাবশত, নাকি গবেষণায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র নাজুক হাতে নাড়াচাড়া করেছিলেন, যাতে অন্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন। গোয়েন্দ সূত্রের মতে, চীন সরকারের বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তবে কিছু কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, এই ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য হয়তো কোনোদিনই জানা যাবে না। এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান মার্ক মিলি স্বীকার করেছেন, নোভেল করোনা ভাইরাস কোনো ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা এ প্রশ্নে কঠোরভাবে অনুসন্ধান করছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এখনও এই ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের কাছে যেসব তথ্যপ্রমাণ এসেছে তা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এটা প্রাকৃতিক। তবে বিষয়টিতে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। ওদিকে গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পরীক্ষায় কি পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে কথা বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করে ইয়াহু এবং ফক্স নিউজ। তবে করোনা ভাইরাসের উৎস গবেষণাগার এমন তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করেছে চীন সরকার। এ নিয়ে বাইরের অনেক বিশেষজ্ঞও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
হোয়াইট হাউজের করোনা ভাইরাস টাস্কফোর্সের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সাবধানতা দিয়েছেন, প্রতিবারই যখন একটি মহামারি দেখা দেয়, তখন কেউ না কেউ বলেন, এই ভাইরাস বা প্যাথোজেনের উৎস একটি গবেষণাগার। চীন এই ভাইরাস যেভাবে মোকাবিলা করেছে তা পুরোপুরি নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন একজন কর্মকর্তা। ওদিকে অনুসন্ধানকারী গোয়েন্দারা এই ভাইরাসের উৎস কি তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের তারবার্তাকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করে যে, চীনের উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি গবেষণাগারের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই তারবার্তা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এমন সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেন নি। করোনা ভাইরাসের সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকার বিষয়েও তিনি সুস্পষ্ট কিছু বলেন নি। তবে তিনি করোনা ভাইরাসকে ‘উহান ভাইরাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছেন, একেবারে শুরুতে যখন গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, ঠিক তখন মার্কিনিদের সেখানে প্রবেশাধিকার দেয় নি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। তারপরে আমরা জানতে পারি সেখানে এই গবেষণাগার আছে। আমরা জানতে পারি, সেখানে ‘ওয়েট’ বা ফ্রেস ফুড মার্কেট সম্পর্কে। আমরা জানতে পারি এই ভাইরাসটির উৎস উহানে। সুতরাং সব কিছু একত্রিত হয়ে মিশে যায়। এখনও অনেক কিছু আমরা জানি না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিয়েই কথা বলছেন। এসব বিষয়ে আমাদের উত্তর জানা প্রয়োজন। কিছু কর্মকর্তা বলছেন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এর জন্য মূল্য দিতে হবে চীনকে। তবে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে চীনের কাছে সেই মূল্য চাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে যুক্তরাষ্ট্র।