যশোরে গভীর রাতে ফাঁড়িতে নিয়ে যুবদল নেতাকে নির্যাতন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে আজিম হোসেন নামে এক যুবদল নেতাকে কোন মামলা ছাড়াই বাড়ি থেকে ধরে এনে বেধড়ক মারধর করেছে চাঁদপাড়া ফাঁড়ি পুলিশ। আমগাছে ঝুলিয়ে তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য পুলিশ তাকে মারধরের কথা অস্বীকার করেছে। অভিযোগে জানা যায়, গত শনিবার গভীর রাতে শহরতলীর ঝুমঝুমপুরের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে এভাবে মারধর করেন সদরের চাঁদপাড়া ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, রবিবার তাকে জীবন নামে এক যুবককে মারধরের পেন্ডিং মামলায় আদালতে সোপর্দও করা হয়েছে। কিন্তু এ মামলার বাদী লিপি খাতুন যুবদল নেতা আজিম হোসেনকে নির্দোষ দাবি করলেও পুলিশ তাকে পাত্তা দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্বজনেরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। আটক আজিম হোসেন ঝুমঝুমপুরের মৃত আব্দুল আজিজ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ফতেপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।
স্বজনেরা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চাঁদপাড়া ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম কোনো মামলা ছাড়াই যুবদল নেতা আজিম হোসেনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। পরে ক্যাম্পে রেখে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সুলতানপুর গ্রামের জীবন নামে এক যুবককে মারধরের মামলায় তিনি জড়িত দাবি করে এ সময় তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আজিম হোসেন ওই মামলার এজাহারভুক্ত কোন আসামি নন। এ খবর পেয়ে রবিবার সকালে ওই মামলার বাদী সুলতানপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে লিপি খাতুন চাঁদপাড়া পুলিশ ক্যাম্পে যান। তিনি এ সময় এসআই শফিকুল ইসলামকে জানান, ‘আজিম হোসেন তার মামলার আসামি নন। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না’। কিন্তু এসআই শফিকুল ইসলাম তার কথায় কোন পাত্তা দেননি। শুধু তাই নয়, এসআই শফিকুল ইসলাম যুবদল নেতা আজিম হোসেনকে জীবনকে মারধরের মামলার সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আটক দেখিয়ে রবিবার আদালতে সোপর্দ করেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী লিপি খাতুন জানান, তার ছেলে খুবই অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। ছেলে আহত হওয়ার পর আজিম তাকে চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। তার সাথে দৌড়াদৌড়িও করেছেন। তাই আজিমকে পুলিশ এ মামলায় ধরে নিয়ে গেছে এ খবর পেয়ে রবিবার সকালে তিনি অন্যদের সাথে ক্যাম্পে (ফাঁড়িতে) গিয়েছিলেন। পুলিশকে বলেছেন, আজিম তার ছেলেকে মারধরের সাথে জড়িত ছিলেন না। এক প্রশ্নের জবাবে লিপি খাতুন জানান, তিনি আজিমের বিরুদ্ধে কোন মামলাও করেননি।
যোগাযোগ করা হলে চাঁদপাড়া ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম যুবদল নেতা আজিম হোসেনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘জীবনকে মারধরের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আজিম হোসেন নন। তবে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছে। তাই তাকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছে। কারণ গত জানুয়ারির শেষের দিকে মামলা করার পর বাদী লিপি খাতুন প্রথমে তাকে (আজিম হোসেনকে) জড়িত দাবি করে আটক করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এদিকে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামান স্বজনদের অভিযোগ সম্পর্কে জানান, তাকে (আজিম হোসেন) যদি মারধর করা হয় অবশ্য এ বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজিম জড়িত না থাকলে তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অপরদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আকরাম হোসেনের আদালতে আজিম হোসেনের জামিন আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে এসে আজিম হোসেন তার ওপর পুলিশের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, শনিবার গভীর রাতে চাঁদপাড়া ক্যাম্পের কয়েকজন পুলিশ তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অথবা মামলার ওয়ারেন্ট আছে কি-না জানতে চাইলে এ সময় ক্যাম্পের আইসি এসআই শফিকুল ইসলাম এর সঠিক জবাব দিতে পারেননি। পুলিশ সদস্যরা তার মা রোকেয়া বেগমকে ধাক্কা মেরে এবং তার দুটি ছোট সন্তানের সামনে তাকে হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যান। এরপর ওই রাতেই তার চোখ, হাত ও পা বেঁধে ক্যাম্পের সামনের আমগাছে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। পরে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে চিৎ করে শুইয়ে ৪ হাত-পা ধরে রেখে ফের মারধর করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে জীবন নামে এক যুবককে মারধর করার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। মারধরের সময় তাকে বারবার বলা হয়, ‘বল তুই জীবনকে মারধর করেছিস এবং তোর সাথে আরো একজন ছিলো। তার নামও বলবি।’ কিন্তু তিনি পুলিশের কাছে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি। কারণ তিনি জীবনকে মারধর করেননি।