ব্যাহত শিক্ষা পুষিয়ে নিতে হবে

0

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায়। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত যে শিক্ষাপঞ্জি অনুসরণ করা হয়, তা আর সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও পড়েছে করোনার প্রভাব। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রথম দফায় ৩১ মার্চ, দ্বিতীয় দফায় ৯ এপ্রিল এবং তৃতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এই ছুটি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ায় এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অনির্দিষ্টকালের জন্য সব কাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে কাস চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করতে পারে।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। মার্চ মাসের শেষ দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সিটি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এপ্রিলের শুরুতেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সিটি এবং প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অলিখিতভাবে স্থগিত করতে হয়েছে। আর কবে স্কুল খুলবে, তা বলতে পারছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও। গত ২৯ মার্চ থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পাঠদান সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচার করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। আর গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের কাসও সম্প্রচার করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু কাসের সময় ও পাঠদানের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। অনেকে বলছে, ২০ মিনিটের এই পাঠদানে শিক্ষকের একপক্ষীয় আলোচনায় আগ্রহ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে সবার ঘরে টিভি নেই।
ওদিকে এবার ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এই পরীক্ষাসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি নতুন তারিখও ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল কবে প্রকাশ করা হবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিমত, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে অবশ্যই সেশনজট হবে। সে েেত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অভিজ্ঞজনরা বলছেন, তি পুষিয়ে নিতে সাপ্তাহিক ছুটি ও সিলেবাস কমিয়ে আনতে হবে বা অতিরিক্ত কাস নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে এখন যেহেতু প্রচুর সময়, তারা নিজেদের উদ্যোগেই পাঠক্রম ও ব্যক্তিগত লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যতটা সম্ভব তারা নিজেরাই সেভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। তবে সবকিছুর সমন্বয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি পরিকল্পিত প্যাকেজ শিক্ষাসূচী করতে হবে। যাতে সব ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেয়া যায়।