দক্ষিণ কোরিয়ার কয়লা আমদানি এক দশকের সর্বনিম্নে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ কয়লা আমদানিকারক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। তবে পরিবেশ দূষণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশটি ধীরে ধীরে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার কমিয়ে আনছে। এর জের ধরে দিন দিন জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কমাচ্ছেন দক্ষিণ কোরীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে চলতি বছরের প্রথম থেকে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। এর প্রভাবও পড়েছে দেশটির কয়লা আমদানি খাতে। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে তাপ কয়লার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দক্ষিণ কোরিয়ার তাপ কয়লা আমদানি কমে এক দশকের সর্বনিম্নে নেমেছে। খবর রয়টার্স।
নিউইয়র্কভিত্তিক বাজারবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ইকনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দক্ষিণ কোরিয়া সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টন তাপ কয়লা আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কম। একই সঙ্গে তা গত ১০ বছরের মধ্যে পণ্যটির সর্বনিম্ন আমদানি। যদিও মার্চ শেষ হতে আরো দুদিন রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে কয়লা আমদানির হিসাব বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টন তাপ কয়লা আমদানি করেছিল। এর পরে আর কোনো বছরের প্রথম প্রান্তিকেই দেশটির তাপ কয়লা আমদানির পরিমাণ এতটা নিচে নামতে দেখা যায়নি। এ সময়ে দেশটিতে সাধারণত জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা চাঙ্গা থাকে। কারণ, প্রথম প্রান্তিকজুড়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকাল বিরাজ করে। চাহিদা চাঙ্গা থাকায় এ সময়ে পণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে দেন দক্ষিণ কোরীয় আমদানিকারকরা। গত তিন বছরের প্রথম প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়া সর্বোচ্চ ২ কোটি ৬০ লাখ টন তাপ কয়লা আমদানি করেছিল।
তবে শীতকালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অভ্যন্তরীণ কয়লা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে বায়ুদূষণের মাত্রাও চরমে ওঠে। ফলে এ সময়ে দূষণ যথাসম্ভব কমিয়ে বায়ুমানের সূচক উন্নতির চেষ্টা হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত পণ্যটির আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশটির সরকার। এর আওতায় গত ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত দেশটির ৬০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রের উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে দেশটি, যা পণ্যটির আমদানি হ্রাসের পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবও পড়েছে দেশটির কয়লা আমদানিতে। শুরুর দিকে চীনের বাইরে মহামারীটির অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এ পরিস্থিতি দেশটির ব্যবসা ও কল-কারখানার কার্যক্রম শ্লথ করে এনেছে। এদিকে এসব খাতে চাহিদা কমে দেশটিতে বিদ্যুতের সামগ্রিক চাহিদায় নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। ফলে কমেছে কয়লা আমদানি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশনের বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লোহ জানান, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ হয়ে পড়েছে। এসব খাতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় দেশটির সামগ্রিক কয়লা ব্যবহার প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
কোরিয়া ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৬৩৩ মেগাওয়াটে। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৭৩ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশ আসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলো থেকে।
তবে কয়লা আমদানি কমলেও বছরের প্রথম প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বেড়েছে এক-চতুর্থাংশের বেশি। রেফিনিটিভ ইকনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। জ্বালানি পণ্যটির দামে মন্দা ভাব এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।