করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যু, আক্রান্ত আরো ৪

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বে মহামারির রূপ নেয়া করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরো চারজন রোগী শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ৭০-এর বেশি। তিনি বিদেশ ফেরত নন, তবে বিদেশ থেকে আসা এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন। সংক্রমণের পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। হৃদযন্ত্রে একবার রিং পড়ানোও হয়েছিল। ইতালি থেকে আসা দুই পুরুষ এবং দেশে থাকা তাদের একজনের এক নারী আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত হন।
গত ৮ই মার্চ এ তথ্য জানায় আইইডিসিআর। তারা তিন জনই চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এরপর গত ১৪ই মার্চ জার্মানি ও ইতালি থেকে আসা আরো দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হন। ১৬ই মার্চ দুই শিশুসহ তিনজন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দেয় আইইডিসিআর। এরপর ১৭ই মার্চ আরো দু’জন আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, তিনি উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন এবং আমরা তাকে হারিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন করে আরো চার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ জন। নতুন করে আক্রান্তের মধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ। আক্রান্তদের একজন আগে যারা আক্রান্ত ছিলেন তাদের পরিবারের সদস্য। বাকি তিন জন বিদেশ থেকে এসেছেন। এদের দুই জন ইতালি, একজন কুয়েত থেকে এসেছেন। তিনি জানান, নতুন আক্রান্তদের একজনের বয়স ৫৫ বছর, একজনের বয়স ৪০ বছর, একজনের ৩৬ বছর এবং অপরজনের বয়স ২০ বছর। এখন পর্যন্ত ১৬ জন আইসোলেশনে আছেন। আর ৪২ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, চিকিৎসাধীন চারজনের মৃদু করোনার উপসর্গ থাকলেও তাদের অন্যান্য রোগের জটিলতা রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানান, ১৭ই মার্চ দু’জন আক্রান্ত হওয়ার যে তথ্য দেয়া হয়েছিল তাদেরই একজন মৃত ব্যক্তি। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তা প্রটোকল অনুযায়ী হবে। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, করোনা ভাইরাসের রোগটি মারাত্মক নয়। কিন্তু ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখানে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে না। এ ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত মোট ৩৪১ জনের নমুনা তারা সংগ্রহ করেছেন। আইইডিসিআর’র কল এসেছে ৪ হাজার ৮৫৭টি। এর মধ্যে করোনা সম্পর্কিত ৪ হাজার ৬৪২টি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কমিউনিটিতে সংক্রমিত হচ্ছে না। বিদেশফেরতদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কমিউনিটিতে ছড়িয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই। করোনার পরীক্ষার কীট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কীটের সংকট নেই। গণস্বাস্থ্য-এর কীট নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে আরো কয়েকটি ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, যার নেতৃত্বে থাকবে আইইডিসিআর। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উৎসাহিত করার জন্য আরো কি করা যায় তা নিয়ে ভাবছে সরকার। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, যদি রোগ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরাও আক্রান্ত হবো। হাসপাতালে করোনা রোগীর সঙ্গে অন্যান্য রোগীরা কিভাবে চিকিৎসা পাবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সীমিত সম্পদ দিয়ে আমাদের সকলকে মোকাবিলা করতে হবে এবং সর্বোচ্চ সেবা নিতে হবে। আইইডিসিআর’র নতুন ফেইজ বুক আইডি, ই-মেইল ঠিকানায় এবং নতুন অ্যাপস (প্রক্রিয়াধীন)-এ সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানান তিনি। আইইডিসিআর-এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টস হচ্ছে-রবফপৎ,ঈঙঠওউ-১৯ ঈড়হঃৎড়ষ জড়ড়স
করোনা ভাইরাস কমিউনিটিতে সংক্রমিত হচ্ছে: যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলেও বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ব্র্যাক মনে করে করোনা ভাইরাস দেশের কমিউনিটিতে সংক্রমিত হচ্ছে। গতকাল ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্র্যাক। সংস্থাটি তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের এ ভাইরাসের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে সম্পৃক্ত করেছে। গতকাল সকালে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের একটি সেল গঠন করা হয়েছে। ব্র্যাক ওই সেলের সদস্য। চীনের উহানে গত বছর ডিসেম্বর মাসে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। এরপর গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছে এ ভাইরাসে। মারা গেছে ৭ হাজার ৫২৯ জন।