আরডিসি নাজিম গ্রামেও বদমেজাজি, বাড়ি ও টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর) ॥ কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনকারী সেই সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের মৃত নিছার উদ্দিনের ছেলে। তবে নাজিম উদ্দিন খেদাপাড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে বড় হন। দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হলেও নাজিমের পিতা নিছার উদ্দিন অনেক আগে থেকেই কাশিপুর গ্রামে শ^শুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন এবং দিনমজুরের কাজ করতেন। নাজিমের পিতা নিছার উদ্দিন অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিন বছর আগে। দিনমজুরের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। পিতার পাশাপাশি তার মা মাজেদা বেগমও অপরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে নাজিম বড়। গতকাল সোমবার সরেজমিন গিয়ে এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী জানান, নাজিম কাশিপুরে নানার বাড়িতে থেকে মনিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। ছোট বেলা থেকে তিনি খুব বদমেজাজি ও একরোখা ছিলেন। গ্রামে কারও সাথে ভালভাবে মিশতেন না। ২০০৪ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন তিনি। ২০০৬ সালে মনিরামপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে (অনার্সে) ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করে এক্সিম ব্যাংকে চাকরি করেন কিছুকাল। ২০১৪ সালে ৩৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হয়ে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর থেকে নাজিম উদ্দিন এলাকার কাউকে পাত্তা দিতেন না। কারণে অকারণে মানুষকে ভয় দেখান। তার ক্ষমতার ভয়ে সবাই চুপ থাকতেন। একই কারণে গতকালও (সোমবার) নাজিমের বিরুদ্ধে কথা বলতে গ্রামবাসীরা ভয় পাচ্ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা এসব কথা জানান। নাজিমের পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী মতবাদে বিশ^াসী বলে জানা গেছে। যদিও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা দাবি করেছেন, নাজিমের পরিবার সবসময় আওয়ামী লীগ ভক্ত। তবে ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নজমুছ শাহাদাত জানান, নজিমের পিতা মূলত বিএনপির সমর্থক ছিলেন। তবে নাজিম কোন দল করতেন তা বোঝা যেত না। এদিকে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় নাজিমের জড়িত থাকার বিষয়টি জানাজানি হলে মনিরামপুরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এলাকায় বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। নাজিমের অর্থবিত্তের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে জোরেসোরে। সাংবাদিকদের মুখে নাজিমের ক্ষমতা অপব্যবহারের বিষয়টি শুনে বিরুপ মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী। এমনকি নাজিমের মা মাজেদা বেগমও তেমনই মন্তব্য করেছেন।
নাজিম উদ্দিন ২০১৪ সাথে সরকারি চাকরিতে যোগদানের ৩-৪ মাস পর একই উপজেলার হোগলাডাঙা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে সাবিনা সুলতানাকে বিয়ে করেন। আব্দুর রাজ্জাক মনিরামপুর পৌরশহরের ভগবান পাড়ায় তার নিজের বাড়িতে থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী তার এক ভায়রা ভাইয়ের সাথে শ^শুর বাড়ির পাশেই সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় কেনা আট শতক জমির ওপরে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন নাজিম উদ্দিন। এছাড়া কাশিপুরে নানার দেওয়া পাঁচ শতক জমির ওপর তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা বাড়ি রয়েছে তার। বাড়িটি চারটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মাত্র ৬ বছরের চাকরি জীবনে কিভাবে তিনি এতো টাকার মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর মনে। তারা নাজিম উদ্দিনের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নাজিমের নির্মাণাধীন চারতলা বাড়ির ঠিকাদার আতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালে হোগলাডাঙা গ্রামের মোসলেম নামে এক লোকের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় আট শতক জমি কেনেন নাজিম উদ্দিন ও তার এক বিদেশী ভায়রা ভাই। সেখানে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ির কাজ চলছে। প্রতি তলা দুই হাজার ৯০০ বর্গফুটের। ১১ মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। বাড়ির শ্রমিক ঠিকাদার তিনি (আতিয়ার)। এ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। গতকাল সরেজমিন কাশিপুরে নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা মাজেদা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘বউমার কাছে শুনেছি, নাজিমের চাকরির স্থানে কি একটা সমস্যা হয়েছে। বিস্তারিত জানি না।’ পরে সাংবাদিকদের কাছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের বিষয়টি শুনে তিনি বলেন, ‘এটা নাজিম ঠিক করেনি। বাড়ি আসলে আমি তাকে বোঝাবো।’ নাজিমের স্ত্রী সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘গত রোববার মনিরামপুর বাজারে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। নাজিমকে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। সোমবার সকালে নতুন একটা নম্বরে নাজিম কল করেছে। সে বলেছে, একটু ঝামেলা হয়েছে। কোন সমস্যা না। আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।’