ব্যস্ত মন্ত্রীর অতি উৎসাহী পিআরওর কাণ্ড!

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক কেউ জানেন না। অথচ দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন তিনি। গণমাধ্যমকর্মীরা পড়িমড়ি করে ছুটলেন মহাখালী। নির্ধারিত সময় ২টা বাজার আগেই সম্মেলন কক্ষে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করে হতবাক হয়ে দেখলেন মন্ত্রী চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের একজন দুপুর ২টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রীকে তার একটি প্রশ্ন ছিল বলে বারবার অনুরোধ জানালেও মন্ত্রী নো, নো, বলে সম্মেলনকক্ষ ত্যাগ করেন। এটি কোনো নাটকের গল্প নয়, এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয় শনিবার দুপুর ২টায় মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন এই মর্মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পিআরও মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান দুপুর সোয়া ১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে তথ্য শেয়ার করেন। এ খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা মহাখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হন।
কারণ, সকালেই ইতালি থেকে ১৪২ জন প্রবাসী বাংলাদেশি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাদের সবাইকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনা হজ ক্যাম্প নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের হজ ক্যাম্পে রাখা হবে নাকি বাড়িতে পাঠিয়ে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে, এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী ও ইতালিফেরত প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনরা উদগ্রীব ছিলেন। স্বল্প সময়ের নোটিশে সংবাদ সম্মেলন ডাকায় অনেকেই ইতালিফেরত প্রবাসীদের হজ ক্যাম্পে রাখা হবে নাকি বাড়ি ফিরে যেতে দেয়া হবে তা জানতে ছুটে যান। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার সময়ের আগেই মন্ত্রী চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীরা বিস্মিত হন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালক আজ নিজেদের মধ্যে কথা প্রসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা যেন দেশে ফিরে না আসেন এবং ফিরে আসলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন ক্যাম্পে থাকতে হবে, এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্ক্রল দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। অতি উৎসাহী ওই জনসংযোগ কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ২টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ইতালি প্রবাসীসহ সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দুপুর ২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ডেকে পাঠান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালক জানতে পারেন ২টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। ২টা বাজার আগেই সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দাতা সংস্থার সদস্যরা তখন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় মন্ত্রী ২টা বাজতে না বাজতেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এ জনসংযোগ কর্মকর্তা আজ নির্ধারিত সময়ের আগে সংবাদ সম্মেলন শুরু ও শেষ করে দিলেও বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে গণমাধ্যমকর্মীদের দীর্ঘক্ষণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরে করোনাভাইরাস নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য বিটের একজন সিনিয়র সাংবাদিক প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘মন্ত্রী সাহেব করোনা নিয়ে একটি মিটিংয়ে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক এসে আমাকে বললেন, মন্ত্রীর একটা বক্তব্য দরকার। তখন আমি সবাইকে দুপুর ২টার দিকে সময় দেই। কিন্তু মন্ত্রী সাহেব ৩০ মিনিটের মধ্যে মিটিং শেষ করে সরাসরি সংবাদ সম্মেলন করেন। মন্ত্রীকে তো আমি বলতে পারি না, এখন সংবাদ সম্মেলন করিয়েন না। আসলে এটা মিস্টেক হয়ে গেছে।’