করোনাভাইরাস যেভাবে মানব শরীরে আক্রমণ করে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক তৈরী করেছে তার নাম কোভিড-১৯। এরআগে কমপক্ষে ছয় ধরণের করোনাভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করেছিলো। যারমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো ‘মারস’ ও ‘সারস’। যেগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ ছিলো সর্দি ও কশি।
করোনাভাইরাসের নামকরণ হয়েছে ল্যাটিন ‘করোনা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ মুকুট। কারণ এর পৃষ্ঠে প্রসারিত স্পাইকগুলো মুকুটের ন্যায় ছড়িয়ে থাকে। ভাইরাসটি তৈলাক্ত লিপিড ঝিল্লীর আবরণে থাকে। লিপিড অণুগুলোর একটি বুদ্বুদে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে, যা সাবানের সংস্পর্শে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে। পরে শ্বাসনালীর কোষগুলোতে যুক্ত হয়ে ‘এসিই-২’ নামে একটি দেহসার (protein) তৈরী করে।ধারণা করা হয়,বাদুড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রথম ছড়িয়েছে এবং মানুষের শরীরে প্রবেশের পর অনুরূপবাবে বিস্তার ঘটতে থাকে।
এ ভাইরাসের জিনোম নিজস্ব আরএনএ দিয়ে গঠিত। সাধারণত করোনাভাইরাসের জিনোমের দৈর্ঘ্য ৩০ হাজারের কম অক্ষরের হয়ে থাকে যেখানে মানুষের ৩ বিলিয়নেরও বেশি হয়। এই ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে। এ প্রোটিন সংক্রামিত হওয়া কোষকে বিনষ্ট করে।
করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ভাইরাসটির তৈলাক্ত ঝিল্লী আক্রান্তের শরীরের কোষ ঝিল্লীর সাথে সংযুক্ত হয়। তারপর আক্রান্তের শরীরে ভাইরাসের আরএনএ সমৃদ্ধ জেনেটিক উপাদানের খন্ডাংশওলো ছেড়ে দেয়।
মানব শরীরের আক্রান্ত কোষটি ভাইরাসের ওই আরএনএ অনুলিপন করে ও ভাইরাস প্রোটিন তৈরি করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা ইমিউনো সিস্টেমে জমা হয়। একই সাথে নতুন ভাইরাসকে একত্রিত করতে সহায়তা করে।
সমস্যা হলো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করলেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। তবে গবেষকরা অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগগুলি পরীক্ষা করছেন যে ভাইরাল প্রোটিনগুলিকে নষ্ট করতে ও সংক্রমণ বন্ধ করতে সক্ষম কিনা।
সংক্রমণের সাথে সাথেই, আক্রান্তের শরীরের কোষীয় অংশগুলো ভাইরাসের স্পাইকগুলোতে আলোড়ন তৈরি করে আর বাকি প্রোটিনগুলো করোনভাইরাসটির আরো অনুলিপি তৈরি করে। এভাবে ভাইরাসের নতুন কপিগুলি একত্রিত হয় ও কোষের বাইরের প্রান্ত ভাইরাসগুলোকে বহন করে
যারফলে আক্রান্ত কোষ ভেঙে যায়। বিনষ্ট হওয়ার আগেও প্রতিটি সংক্রামিত কোষ করোনাভাইরাসের কয়েক মিলিয়ন কপি তৈরি করে। এভাবে ভাইরাসগুলো কাছের কোষগুলিতে সংক্রামিত হয় বা ফোঁটা আকারে লাংসে যেয়ে পড়ে।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে শরীরে জ্বর হয়। শেষ পর্যাযে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়ে ও ভাইরাসটি ফুসফুসের কোষগুলিতে আক্রমণ শুরু করে। ফুসফুসে তরল ও মৃত কোষগুরো বাধা হয়ে সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। সংক্রমণের কিছু শতাংশে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ও রোগ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস ও গুগল