মুখ থুবড়ে পড়েছে মোংলা বন্দরের ড্রেজিং কাজ

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ মোংলা বন্দরের প্রবেশদ্বার বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ফেয়ারওয়ে বয়ার চ্যানেলের আউটার বার এলাকায় ড্রেজিং কাজ শুরুতেই অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের পর চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মোট কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ জুলাই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। এদিকে আউটার বার এলাকায় চলমান ড্রেজিং কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে গত সোম ও মঙ্গলবার পরিদর্শন করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং এ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আঞ্চলিক দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চায় সরকার। এ কারণে মোংলা সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমাদানি-রফতানি বৃদ্ধিসহ এ বন্দরের গতি বাড়াতে সরকার বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালে বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পর এই প্রথম বন্দর চ্যানেলের প্রবেশদ্বার আউটার বার এলাকায় ড্রেজিং কাজ শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে বেশ কয়েকবার এ এলাকায় ড্রেজিং কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতার কারণে তা কার্যকর করতে ব্যর্থ হতে হয়। মোংলা বন্দরের এ্যাংকোরেজ এলাকা পর্যন্ত ১০.৫ মি. ড্রাফটের জাহাজ আনায়ন করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ফেয়ারওয়ে বয়ার পশুর নদীর মোহনায় হিরণ পয়েন্ট ১০ নম্বর বয়া থেকে গভীর সমুদ্রের ৫ নম্বর এলাকার হংষরাজ বয়া পর্যন্ত মোট ১১ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পণ্যবাহী বড় জাহাজ আগমনে বিঘœ সৃষ্টি হয়ে আসছিল। মাঝে মধ্যে পণ্যবাহী সামুদ্রিক জাহাজগুলোকে এ এলাকার ডুবো চরে আটকে পড়তে হতো। এতে আমদানি-রফতানিকারকদের চরম ভোগান্তি চলছিল। এ অবস্থায় শুরু হওয়া ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ হলে জাহাজ আগমনে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়বে। সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি মোংলা বন্দরে ভিড়তে পারবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোলিক বিভাগের উপ প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক বজলুর রহমান জানান, হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি চীনা কোম্পানী মোংলা বন্দরের আউটার বার এলাকায় ড্রেজিং কাজ করছে। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর একনেকে এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দরপত্রে কাজ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানটি সাথে ৭১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত বছর ফেরুয়ারিতে ডাইক নির্মাণসহ খনন কাজ শুরু করে। কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে যাওয়ায় পরে এ ড্রেজিং কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে এ কাজ আবার শুরু করা হয়। হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লি.ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন জেভি কর্পোরেশন নামক দু’টি বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রেজার মেশিন ‘সিং হাই ট্যাং’ দিয়ে পশুর চ্যানেলের আউটার ড্রেজিং কাজ চালাচ্ছে। এ কাজে কাটার সাকশন ড্রেজার ব্যবহার হচ্ছে। চলমান ডেজিং প্রকল্পের মাধ্যমে কাটার সাকশন দিয়ে ১৫ লাখ ঘন মিটার ও হপার ড্রেজার দিয়ে ৪২ লাখ ঘন মিটারড্রেজিং করা হয়েছে। এক কোটি তিন লাখ ৯৫ হাজার ঘন মিটার মাটি ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে খনন করার কথা রয়েছে। এ ড্রেজিং কার্যক্রম চলতি বছরের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী বজলুর রহমান জানান। তিনি আরো বলেন, ড্রেজিং প্রকল্প শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে চার গুণবৃদ্ধির পাশাপাশি ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট পণ্য বোঝাই করে যে কোন জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতে পারবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোংলা বন্দরের সম্ভাব্য বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠু ও দক্ষতার সাথে মোকাবেলার জন্য আউটারবার এলাকায় ড্রেজিং এর মাধ্যমে ৮.৫ মিটার সিডি গভীরতা অর্জন করা হলে স্বাভাবিক জোয়ারে ১০.৫ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ এ্যাংকোরেজে হ্যান্ডেল সম্ভব হবে । প্রকল্প শেষে মোংলা বন্দর অধিক সংখ্যক জাহাজ আগমন এবং মালামাল হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হবে।