যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সোমবার ৯ মার্চ যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক (মার্কা) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিন সকালে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে স্ব স্ব দলের প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের মাঝে প্রতীক তুলে দেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর। প্রতীক পাওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ৩ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পক্ষে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, বিএনপির প্রার্থী আবুল হেসেন আজাদ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান নিজে প্রতীক গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহীন চাকলাদার নৌকা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ ধানের শীষ ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক গ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগ নেতারা আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা জানান, সর্বাত্মক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমেই তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবেন। । অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থীই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে তাহলে কেশবপুরে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না এটা জেনেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা আশা করি, বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারের পক্ষ থেকে যে ন্যাক্কারজনক ভোট কারচুপি করা হয়েছে কেশবপুরের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা হবে না। এজন্য আমরা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি বলেন, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে কেশবপুর আসনে নৌকার ভরাডুবি হবে। তবে এ ব্যাপারে যশোর জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হুময়ুন কবীর সাংবাদিকদের জানান, যশোর-৬ আসনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা চেয়েছেন। উল্লেখ্য, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক গত ২১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে এ আসনটি শূন্য হয়।
এদিকে উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রশাসনের হসক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ। সোমবার দুপুরে তিনি দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে এ আবেদন করেন। আবেদনে তিনি ২৯ মার্চের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করে তুলতে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে ধানের শীষ প্রতীক প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটানিং কর্মকর্তা হুময়ুন কবীরের সাথে দেখা করে লিখিত আবেদন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় নির্বাচন অফিসার নেতৃবৃন্দকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আয়োজনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। জেলা নির্বাচন অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর নেতৃবৃন্দ যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশের বিশেষ শাখায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ উল্লেখ করেন, বিএনপি সব সময়ই একটি অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করে আসছে। এজন্য আমরা প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। লিখিত আবেদনে তিনি বলেন, কেশবপুর নির্বাচনে ইতোমধ্যেই আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সভা-সমাবেশে যে সব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা থেকে ভোটারদের মাঝে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও নির্বাচনে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। লিখিত আবেদনে তিনি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করার স্বার্থে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।