সিসাসহ কাঁচামালের অভাবে ব্যাটারি উৎপাদন খাতে সংকট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমদানি-রফতানি অনেকটা স্থবির। চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় অনেক পণ্যের উৎপাদনও কমে আসছে। কয়েক মাস ধরে সিসাসহ বিভিন্ন উপকরণ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের ব্যাটারি খাতও অস্থির হয়ে উঠেছে। এক মাসের ব্যবধানে দেশের ড্রাইসেল ব্যাটারির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ব্যাটারির দাম বেড়েই চলেছে। আগামীতে দাম আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় শিল্প ও পরিবহন খাতের প্রয়োজনীয় ব্যাটারির মজুদ প্রবণতাও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারাও।
উৎপাদক ও বাজারসংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে লেড বা সিসার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। ব্যাটারি উৎপাদনে সিসা আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশই হয় চীন থেকে। এছাড়া ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও সিসা আমদানি হয়। বর্তমানে চীন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান সংকট মোকাবেলায় আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু চীন থেকে আমদানি করা সিসার দাম তুলনামূলক অনেক কম হলেও বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করা সিসার দাম অনেক বেশি। ফলে দেশের বাজারে ব্যাটারি উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেছে কোম্পানিগুলোর। এসব কারণে দেশের স্ক্র্যাপ সিসা সংকটের মূল উৎস পুরনো ব্যাটারির দামও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে প্রতিটি পুরনো ব্যাটারি (২০০ অ্যাম্পিয়ার) বিক্রি হতো ৩ হাজার ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকায়। বর্তমানে এসব পুরনো ব্যাটারির দাম বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকায়। চীন ও বহির্বিশ্বের করোনাভাইরাসের সংকট কমে আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হলে পুরনো ব্যাটারির দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা বা পুরনো ব্যাটারি সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠানগুলো।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাটারি তৈরিতে সিসা ছাড়াও সেপারেটর, অ্যান্টিমনি, রেড অক্সাইড, বেরিয়াম সালফেট, প্লাস্টিক দানার উপকরণ প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এসব উপকরণের জন্য প্রায় পুরোটাই চীননির্ভর। সিসাসহ বিভিন্ন উপকরণের সংকটে ব্যাটারি উৎপাদনের খরচও বেড়ে গেছে। এসব কারণে বাজারে চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ দিতে পারছে না ব্যাটারি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলো।
জানতে চাইলে দেশের অন্যতম ব্যাটারি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হ্যামকো করপোরেশনের চট্টগ্রামের ম্যানেজার আহসানুল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাটারি তৈরির প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। চীন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজার থেকে স্ক্র্যাপ সিসার ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তাছাড়া বিকল্প দেশগুলো থেকে সিসা আমদানি সময়সাপেক্ষ এবং দামও বেশি। এসব কারণে দেশে ব্যাটারি ও ব্যাটারি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো ছাড়া কোম্পানিগুলোর উপায় নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশে ব্যাটারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ ব্যাটারিজ। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ২৭টি দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি রফতানি করে কোম্পানিটি। এছাড়া হ্যামকো করপোরেশন, পান্না গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেক, ভোলটেক্স, ইউনিক, ইস্টার্ন, বিটি ব্যাটারি উৎপাদন, বিপণনে নেতৃত্বে রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নন-ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাটারি উৎপাদন ও বিপণন করে।
একসময় স্টোরেজ বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য আইপিএসে ব্যাটারির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকলেও ব্যাটারি মূলত যানবাহনে ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি যানবাহনে একটি করে ব্যাটারি যুক্ত থাকে। এছাড়া জেনারেটর, বিদ্যুত্চালিত যানবাহন, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, সেলফোনের টাওয়ারে সার্বক্ষণিক ব্যাটারির চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানিগুলোর এক হিসাবে সারা দেশে প্রতি মাসে এক লাখ ইউনিট ব্যাটারির চাহিদা রয়েছে। চীন থেকে কাঁচামাল রফতানি বন্ধ থাকায় ভারতসহ অন্যান্য দেশেও সিসা ও আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। এসব কারণে আমদানি শুরু হলেও ব্যাটারি উৎপাদনের খরচ আগের চেয়েও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।