মণিরামপুরে রাস্তার কাজে তোলা হচ্ছে নদীর বালু, সেতু ও শ্মশান ঝুঁকিতে

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় মুক্তেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সড়ক মেরামত কাজের জন্য নদীতে বালু তোলার যন্ত্র বসিয়ে ওই বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলায় ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হাজিরহাট এলাকায় নদীর ওপর নির্মিত হাজিরহাট সেতু এবং নদীর পাড়ে অবস্থিত হাজিরহাট শ্মশান। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে দেখাগেছে, উপজেলার হাজিরহাট বাজারের উত্তর পাশে পশ্চিম থেকে পূর্বে চলে গেছে মুক্তেশ্বরী নদী। নদীর ওপর হাজিরহাট সেতু। সেতুর ১০০ গজ পূর্বে নদীর দণি পাড়ে হাজিরহাট শ্মশান। হাজিরহাট বাজার থেকে একটি সড়ক এই সেতু হয়ে অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী বাজার পর্যন্ত চলে গেছে। এক কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ মেরামতের কাজ চলছে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স সড়ক মেরামতের কাজ করছে। সড়কটির দুই পাশে মাটি দিয়ে বেঁধে উঁচু করা হয়েছে। এখন চলছে সড়কের মাঝের নিচু অংশ বালু দিয়ে ভরাটের কাজ। ঠিকাদার মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে সড়ক ভরাটের কাজ করছেন।
নদীর পাড়ে যেয়ে দেখা যায়, হাজিরহাট সেতুর পূর্ব পাশে শ্মশানের সামনে মুক্তেশ্বরী নদীতে ভাসছে একটি পাটাতন (বোর্ড)। তেলের কয়েকটি টিনের ড্রামের ওপর তক্তা বিছিয়ে বাঁশের সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে পাটাতন। ভাসমান পাটাতনে বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মোটর) রয়েছে পাটাতনের ওপর। একটি যন্ত্র থেকে পাইপ নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু কেটে ওপরে তোলা হচ্ছে এবং অপর যন্ত্রটি পানির সঙ্গে সেই বালু প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। প্রায় ৩০০ গজ দূরে বালু গিয়ে পড়ছে সড়কে। বালু পড়ে উঁচু হচ্ছে সড়কের নিচু অংশ। নদীতে বালু তোলার কাজ করছিলেন চার-পাঁচজন শ্রমিক।
মনিরামপুর উপজেলার নেবুগাতী গ্রামের মিলন মণ্ডল বলেন, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কুচলিয়া শ্মশানের কাছে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে রাস্তায় দেওয়া হয়েছে। এখন হাজিরহাট শ্মশান এবং সেতুর নিকট থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলে রাস্তার অপর অংশে দেওয়া হচ্ছে। এতে যে কোনো সময় শ্মশান নদীর মধ্যে ভেঙ্গে পড়তে পারে।’ হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে বলেন, ‘বর্তমানে নদীর যে অংশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে হাজিরহাট সেতু ধসে যাওয়া এবং হাজিরহাট শ্মশান নদীর মধ্যে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে।’ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. জাকাউল্লাহ বলেন,‘আমার লাইসেন্সে অন্য একজন সড়কটি মেরামতের কাজ করছেন। নদী থেকে বালু তোলা ঠিক নয়। তিনি নদী থেকে বালু তুলে সড়কটি মেরামতের কাজ করছেন কি না আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন,‘মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তোলার খবর পেয়েছি। উপজেলা সহকারী কমিশনারকে(ভূমি) সরেজমিনে যেয়ে বালু তোলা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।’