যশোরে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানেও করোনার প্রভাব

0

বিশেষ প্রতিবেদক॥ যশোরের দু’টি প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করে। যার মধ্যে চীনে রফতানি হয় অর্ধেকের বেশি পণ্য। আর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ১৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি, ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ আমদানি করে। করোনা ভাইরাসের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে আমাদনি-রফতানি। ফলে ব্যবসায়ীদের তির পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন এসব প্রতষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ব্যবসায়ীদের তির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের খরচও বাড়বে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার এসএএফ লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ৬০ শতাংশই রফতানি হয় চীনে। এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) বিধান কুমার হোড় বলেন, চীনে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় রফতানি কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সেইসঙ্গে কমেছে উৎপাদন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রফতানির ৬০ ভাগই চীনে যায়। প্রায় ৮০ কোটি টাকার পণ্য আমরা চীনে রফতানি করি। এখন সেটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কিছু অংশ যায় ইতালি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রে।’ সবসময় কর্মমুখর এ প্রতিষ্ঠানটিতে এখন প্রাণচাঞ্চল্য নেই বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোলার শয়ন শেখ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে স্টাফ ও ওয়ার্কার মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জন কাজ করেন। কিন্তু এই সময়ে প্রায় অর্ধেক কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। যাদের বেতনভাতা দেওয়া হবে না। এ পরিস্থিতিতে সেইসব ওয়ার্কাররা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে তা বলতে পারছি না।’ একই অবস্থা যশোর বিসিক শিল্প নগরীর এমইউ সি ফুডের। বহু প্রচেষ্টায় চীনে চিংড়ি রফতানি শুরু করলেও করোনার প্রভাবে তা বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু ইউরোপের বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমইউ সি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর আমরা গত বছর চীনে ৮-১০ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করতে সম হই। ২০২০ সালে আমাদের টার্গেট ছিল ১৮-২০ কোটি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই অবস্থার কারণে নতুন কোনও অর্ডার আমরা পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আগে মোংলায় প্রতিমাসে আমরা চারটি জাহাজ পেতাম, এখন দু’টি। এতে করে আমাদের শিপমেন্ট দারুণভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কর্মী ছাঁটাই করতে হবে।’ অপরদিকে চীন থেকে ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ আমাদনিকারক প্রতিষ্ঠান সুদাদ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার ইকবাল আল জাহিদ বলেন, ‘আমরা যশোরে ১৫-১৬টি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকি। প্রতিদিন দেড় থেকে ২০০ গাড়ি (ইজিবাইক) বিক্রি হতো। এখন গাড়ির যন্ত্রাংশ, ব্যাটারির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি। এমন অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চললে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। যশোর চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, করোনা সমস্যা দ্রুত সমাধান হলে ব্যবসায়ীরা আস্তে আস্তে উতরে যেতে পারবেন। কিন্তু যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ব্যবসায়ীরা যেমন চরম আর্থিক তির শিকার হবেন, তেমনি বেড়ে যাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের খরচ। কেননা এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্য চীন থেকে আমদানি করতে হয়, যেগুলো আমাদের রোজকার দিনে লাগে। চাহিদা অনুযায়ী মালামাল আমদানি করতে না পারায় সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন সমস্যায়। তাদের লাখ লাখ টাকার পণ্য বাজারে বাকি দেওয়া রয়েছে, ব্যাংক লেনদেনেও সমস্যা বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পণ্যের দাম ক্রয়মতার বাইরে চলে যাবে।