যশোরের শেখহাটিতে সন্ত্রাসী জুয়েলের আস্তানায় অভিযান, বিপুল অস্ত্র-গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরতলীর শেখহাটির কুখ্যাত সন্ত্রাসী জুয়েলের নতুন আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাত ও গতকাল বুধবার দুপুরে ‘কাজী ছাত্রাবাস’ নামে ওই আস্তানায় দু দফা অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। কিন্তু তারা সন্ত্রাসী জুয়েল ও তার পিতা আলমকে আটক করতে পারেননি। তবে ছাত্রাবাস থেকে সন্দেহভাজন ১৬ জন ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, শেখহাটি জামরুলতলার কাজী ছাত্রাবাসে সন্ত্রাসী জুয়েল ও তার সহযোগীরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ করে রেখেছে গোপন সূত্রে এ খবর পেয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী শেখ ও কোতয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান এ অভিযানে অংশ নেন। টিনের ছাউনির ওই ছাত্রাবাসের ১০টি রুমে রাত আড়াইটা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান, একটি ওয়ান শ্যুটারগান, বন্দুকের ৫ রাউন্ড গুলি, বার্মিজ চাকু ৩টি, রামদা ২টি, দেড়শ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, এক কেজি গাঁজা, রড ও লোহার পাইপ ৫টি, ককটেল ৫টি, মোটরসাইকেল ২টি, বিদেশি মদ ৫ বোতল, বোমা তেরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। কিন্তু জুয়েল ও তার পিতা আলম পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি। তবে ছাত্রাবাস থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৬ জন ছাত্রকে তারা হেফাজতে নিয়েছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসের একটি রুমে মূলত এসব অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। ওই রুমে যশোরে পলিটেকনিক ইনসটিটিউটের ইলেক্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌফিক এলাহী, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু হেনা রোকন ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফিউন থাকতেন। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাতের অভিযানে সন্ত্রাসী জুয়েলের আস্তানায় বেশ কিছু কনডমও পাওয়া যায়। এছাড়া সেখান থেকে ইয়াবা ও গাঁজা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী জুয়েল ওই এলাকায় বড় ধরনের মাদকের কারবার চালিয়ে আসছে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত জুয়েল ও তার পিতা আলমকে আটকের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, রাতে শেখহাটিতে সন্ত্রাসী জুয়েলদের বাড়িতেও তারা অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কোনকিছু পাওয়া যায়নি। তবে রাতে অভিযানের পর কাজী ছাত্রাবাস তারা কর্ডন করে রেখেছিলেন। গতকাল বুধবার দুপুরে ফের কাজী ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালান তারা। এ সময় ওই ছাত্রাবাস থেকে পিস্তলের একটি ম্যাগজিন, পিস্তলের ৩ রাউন্ড গুলি, একটি বার্মিজ চাকু ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে শহরের দড়াটানায় সন্ত্রাসী জুয়েল ও তার সহযোগীরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশেদুল ইসলাম রাহুল নামে এক যুবককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। রাহুল চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় ৮ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়। কিন্তু মামলা দায়েরের পর জুয়েল ও তার সহযোগীরা বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এমন কী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা মামলার অন্যতম সাক্ষী শেখহাটির হাওলাদার রনিকে বেধড়ক মারধর করে। আহত হাওলাদার রনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রাণভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত করতে সাহস পাননি। তবে সন্ত্রাসীদের হুমকি ধামকি এবং সাক্ষী রনিকে মারধরের বিষয়টি জেনে যায় পুলিশ। এরই প্রেক্ষিতে এবং অস্ত্র মজুদ রাখার গোপন সংবাদ পাওয়ায় সন্ত্রাসী জুয়েলের শেখহাটির জামরুলতলার আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালায়। স্থানীয়রা জানান, শেখহাটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত কাজী আলমগীর হোসেন ওরফে আলমের ছেলে তৌহিদুর রহমান ওরফে জুয়েল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পিতার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। অস্ত্র ও মাদকের কারবারসহ এলাকায় বেশুমার চাঁদাবাজি করে আসছেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী জুয়েল। পলিটেকনিক ইনসটিটিউটের নিরীহ ছাত্রদের ধরে এনে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে এই জুয়েল গং। তাদের হাতে বহু ছাত্র নির্যাতিত হয়েছে। সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে র‌্যাব শেখহাটিতে সন্ত্রাসী জুয়েলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছিলো। এ ঘটনায় জুয়েলের স্ত্রী আটক হয়েছিলো। কিন্তু সে সময় জুয়েল কৌশলে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ধরতে পারেনি র‌্যাব। এ ঘটনার পর জুয়েল তার আস্তানা পরিবর্তন করে। বাড়ি ছেড়ে সে বছর খানেক আগে তাদের কাজী ছাত্রাবাসে নতুন আস্তানা গড়ে তোলে। সেখানে অস্ত্র ও মাদকের কারবার ছাড়াও ছাত্রাবাসে নিয়মিত মাদক সেবন ও যৌনকর্মীদের নিয়ে ফুর্তি করা হতো। পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসী জুয়েলের বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্রসহ ৭ মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার দু দফা অভিযানে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় জুয়েল ও তার পিতা আলমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করা হবে।