চৌগাছার আমবাগান মুকুলে মুকুলে ভরা ভাল ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা

0

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিটি গাছ মুকুলে ভরে গেছে। ছোট গাছগুলোর ডাল মুকুলের ভরে মাটি ছুঁইছুঁই। আম চাষিরা মনে করছেন গাছগুলোতে যে পরিমাণ মুকুল দেখা দিয়েছে, তাতে করে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলার জগদীশপুর, পাতিবিলা, নারায়ণপুর, স্বরুপদাহ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নসহ অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রাম আম চাষের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। এমন এক সময় ছিল এ অঞ্চলের মানুষ বাড়ির আঙিনায় কিংবা পতিত জমিতে যেনতেনভাবে আম গাছ লাগাতেন। ওই গাছে যে পরিমাণ আম হতো, তা নিজেরা খাওয়াসহ চলতো আতিথিয়তা। কিন্তু সময়ের পালাক্রমে এখন বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হচ্ছে। চৌগাছার উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে রফতানি হচ্ছে। আম পাকার মৌসুম এলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আম ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন চৌগাছায়। তারা বাগানে বাগানে ঘুরে পছন্দ মত আম কিনে তা ট্রাকে করে নিয়ে যান। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চৌগাছায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর ৩৪০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৯৫ হেক্টর, আম্রপলি ৩৮০ ও স্থানীয় জাত ৩৫ হেক্টরে। মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে আম চাষ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জগদীশপুর গ্রামের আমচাষি রোকনুজ্জামান বাবু জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেছেন। এর মধ্যে আম্রপলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি উল্লেখযোগ্য। গত তিনবছর ধরে তার বাগান থেকে আম বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর প্রতিটি বাগানের আম গাছ মুকুলে ভরে গেছে। আমচাষি রোকনুজ্জামান বাবুর মত ওই মাঠে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ করেছেন। যেদিকে নজর যায় সেদিকেই দেখা মিলবে আমগাছ। এখন মুকুলের সময়, তাই মাঠজুড়ে মুকুলের মৌ মৌ সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন আমচাষিরা।
সূত্র জানায়, স্থানীয় জাতের আমের পাশাপাশি আম্রপলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি আমের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। কিন্তু গত তিনদশকে কৃষি ও ফল বিজ্ঞানীরা আমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে আমে এনেছেন নিত্য নতুন স্বাদ, গন্ধ ও রং। এ সব আমের চাষ করে অনেক চাষিই আজ স্বাবলম্বী। দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন জাতের আমের চাষ হলেও চৌগাছায় নতুন জাতের আমচাষ সে ভাবে বিস্তার লাভ করেনি। ফল বিজ্ঞানীদের মতে, সারা পৃথিবীতে মোট ৩৫ প্রজাতির আম রয়েছে। এসব জাত ভাঙিয়ে ও শংকরায়ণ করে দেশে দেশে উদ্ভাবিত হয়েছে আরও কিছু উন্নত জাত। বাংলাদেশের ফল বিজ্ঞানীরাও গত তিন দশকে ১০ টির অধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি জাতের আম চাষেও ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। আমের পুষ্টি উপাদান অনেক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মৌসুমী ফল আম খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কারণ আমে ফসফরাস, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম আছে। তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য আম বিশেষ উপকারী ফল। ভিটামিন সি, এ, বি, রিভোফ্লাবিন, নায়াসিন, থায়ামিন থাকার কারণে অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর হয় এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকে। আমে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়। এছাড়া হার্টের সমস্যা, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা, ক্যান্সারসহ নানা রোগ উপশমে আমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন জানান, চৌগাছায় দিনদিন আমচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমচাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। সে কারণে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই চাষ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মুকুল আসা থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত আম নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষি অফিস আম চাষিদের এ বিষয়ে নানা পরামর্শ প্রদান করে আসছে বলে তিনি জানান।