শিপলু জামান,কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ॥ ফুলনগরীখ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে জারবেরা ফুলের। শুধু জারবেরাই নয় পাশাপাশি গ্লালোডিয়াস, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, ভূট্টা ফুল, লিলিয়াম ও স্ট্রবেরি ফল চাষে নজর কেড়েছে টিপু সুলতানের বাগান। নিজের প্রায় ১৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন এই ফুলের বাগান। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হচ্ছে এই ফুল। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ও পহেলা ফাল্গুন এই তিন দিবসকে সামনে রেখে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রায় তিন বিঘা জমিতে প্রথম জারবেরা ফুলের বীজ রোপন করেন ফুলচাষি টিপু সুলতান। বীজ আনা হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। রোপনের তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। একটি গাছ একাধারে দুই থেকে তিন বছর ফুল দেয়। ফুল ক্ষেতের ওপর বিশেষ ধরনের পলিথিনের ছাউনি দেন তিনি। চলতি বছর উপজেলার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করা হয়েছে। যে কারণে এ এলাকাটি মানুষের কাছে ফুলনগরী বলে পরিচিত। বিদেশি জাতের এই জারবেরা ফুল লাল, সাদা, হলুদ ও গোলাপিসহ ৮টি বাহারি রঙের হয়ে থাকে। তবে এই ফুলের কোনো গন্ধ নেই। বিদেশি জাতের এই ফুলটি ক্ষেত থেকে তোলার পরও প্রায় দু সপ্তাহ তাজা থাকে। যে কারণে বাজারে এই ফুলের চাহিদা বেশ।
ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করে প্রথম তিনি ৯৬ শতক জমিতে রোপন করেন। এরপর তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। বীজ রোপন, ক্ষেতের চারপাশে বাশেঁর বেড়া স্থাপন, ওপরের ছাউনি, সার ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। ফুল পরিচর্যার জন্য চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। বর্তমানে ১৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফুল ও ফলের চাষ করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, গত ছয় মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার ফুল সংগ্রহ করা যাচ্ছে বাগান থেকে। একটি ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এই ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, জার্মান পরিবেশবিদ ডাক্তার ট্রগোট জারবের এর নামানুসারে ফুলটির নামকরণ করা হয়। জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। টিপু সুলতান একজন সফল ফুল চাষি। তিনি বিভিন্ন ফুল ও ফলের চাষ করেন। তাকে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়। এবার কালীগঞ্জে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফুলের চাষ করা হয়েছে।