কম ভোট যেখানে : সকালেই আতঙ্ক সৃষ্টি, কেন্দ্রমুখী হননি ভোটাররা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে উত্তরের নিকুঞ্জ মডেল কলেজ কেন্দ্রে। মাত্র আট ভাগ ভোট পড়া এ কেন্দ্রে সকালে অনেক ভোটার গেলেও এক পক্ষের কেন্দ্র দখলের কারণে দিনভর আর ভোটারদের দেখা মিলেনি। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কলেজটিতে স্থাপিত দোতলা ও তিন তলায় নারী ভোটারদের ভোটগ্রহণ করা হয়। সেখানে দুটি কেন্দ্রের একটিতে আটভাগ ভোট পড়ে। কেন এতো কম ভোট এই কেন্দ্রে তা অনুসন্ধানে এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়েছে মানবজমিন। ভোটে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, স্থানীয় ভোটার ও ভোটের দিন কেন্দ্র দেখেছেন এমন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ওই দিনের ভোটের চিত্র। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সকালে ভোট শুরুর সময়ই ওই কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। কেন্দ্র এক পক্ষের দখলে চলে গেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এ কারণে সকালে কিছু ভোটার কেন্দ্রে গেলেও পরে কেউ আর কেন্দ্রমুখি হননি। ফলে দিন শেষে স্বল্প সংখ্যক ভোট পড়ে এ কেন্দ্রে। এলাকাবাসী জানান, ১লা ফেব্রুয়ারি ওই এলাকায় তেমন কোনো ভোটের আমেজ ছিল না। সেখানকার চিত্র ছিল অন্য দিনগুলোর মতোই। তবে চাপা আতঙ্ক ছিল সর্বত্র। কেন্দ্রের আশপাশে মহড়া ছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। যে কারণে ভয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিলেন ঢাকা উত্তরের ১৭নং ওয়ার্ডের ওই কেন্দ্রের ভোটাররা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, নিকুঞ্জ মডেল কলেজের ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২হাজারের কাছাকাছি। যার মধ্যে সারাদিনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৮ ভাগ ভোটার। এ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসহাক মিয়া পেয়েছেন ১১৭ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহিনুল আলম পেয়েছেন ৩২ ভোট। স্বতন্ত্র থেকে অংশ নেয়া প্রার্থী শরীফুল পান ১ ভোট। এছাড়া ১৭নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ১১১ টি ভোট পেয়েছেন। গতকাল এই কেন্দ্রের ভোট নিয়ে বিজয়ী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মানবজমিন। তারা অবশ্য এই ভোটকে স্বাভাবিক বলে বর্ণনা করেন। তাদের দাবি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। নারী ভোটার বলে উপস্থিতি কম ছিল।
দুই হাজার ভোটারের মধ্যে এত কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি কেন? ফল প্রকাশের পর থেকে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাঝে। সরজমিনে নিকুঞ্জের ওই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের দিনের কথা জানতে চাইলে কলেজটির নিরাপত্তারক্ষী কিছু জানেন বলে দাবি করেন। তবে কলেজের প্রিন্সিপাল শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার এখানে কোনো স্টাফ ভোটের দিন ছিলেন না। কলেজের চাবি আনসারদের দায়িত্বে দিয়ে গেছি। ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন এসে চাবি বুঝে নেন। এছাড়া আমরা কিছু জানি না। জানার কথাও নয়। কলেজের পাশের একটি বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী শাহ জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই কেন্দ্রে তেমন কোনো ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, আমার ভোট ছিল দক্ষিণখানে। সেখানে ভোট দিয়ে এসে আবার বাড়ির কাজে ফিরছি। সারাদিন দেখলাম তেমন কোনো ভোটার ছিল না। তবে এলাকার নেতারা আসা যাওয়া করছে। শাহজামান আরো বলেন, মানুষ ভয়ে ভোট দিতে আসে নাই। চলতি পথে এলাকাবাসীদের মধ্যে আফজাল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, আমি তেমন এখানে ছিলাম না। আর এটা তো মহিলাদের কেন্দ্র। যতটুকু জানি, এই কেন্দ্রে ভোটার তেমন ছিল না। মানুষের হয়তো ভয় কাজ করেছে তাই ভোটাররা আসেননি সেভাবে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শাহিনুল আলম বলেন, আমি এই এলাকারই ছেলে। আশা করেছিলাম এই কেন্দ্রে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো। কিন্তু সকালেই আমার এজেন্টকে বের করে দিয়েছে মারধর করে। আমি দুই বার পরিদর্শন করি নিকুঞ্জ মডেল কলেজে। ফোনে জানতে পারি, আমার এজেন্টকে কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হয়নি। তখন সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। দায়িত্বরত পুলিশের কর্মকর্তাদেরও অভিযোগ জানাই। কোনো প্রতিকার পাইনি। আওয়ামী লীগের লোকজন আমার এজেন্টকে বসতেই দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, এই কলেজে নারীদের দুটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এরমধ্যে নীচ তলা ও দোতলার কেন্দ্রে ভোট পাই ৪৪টি। আর যেটি ৮.৭৩ ভাগ ভোট সর্বনিম্ন রেকর্ড তাতে ভোট আসে ৩২টি। সকালে আমার এজেন্ট বের করে দেয়ার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। ভোটার সংখ্যা কম কেন এমন প্রশ্নে যোগাযোগ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসহাক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ৪৮টা কেন্দ্র এত কথা আমি জানি না। এদিকে সতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া আরেক প্রার্থী শরীফুল বলেন, ফোনে অনেক কথা বলা যায় না। আমি নিকুঞ্জ মডেল কলেজের ওই কেন্দ্রে যেতেই পারিনি। সব দখল করা ছিল। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ঢাকা উত্তরের ১, ১৭ ও ১৮নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়া হাছিনা বারী চৌধুরী বলেন, আমি ভোটের দিন ওই কেন্দ্রে দেড়টার দিকে গিয়েছিলাম। আমার কাছে তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়েছে। ওই কলেজের দুই কেন্দ্রে আমার ভোট পড়ে ১৪৬ ও ১১১টি। আমার কাছে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। প্রসঙ্গত, নির্বাচনের আগেই গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচন কমিশনের কাছে ঢাকার দুই সিটির ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে তালিকা জমা দেয়। তার মধ্যে ১৮টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ঢাকা উত্তরে। এই ১৮টির মধ্যে একটি ছিল নিকুঞ্জ মডেল কলেজ।