প্রথমার্ধে রাজস্ব ঘাটতি ২৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দিনাজপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম হয়েছে। এজন্য অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি হ্রাসকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দায়ী করলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বিমুখী নীতির কারণেই বন্দরের রাজস্ব আহরণে এ ঘাটতি।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৭ কোটি ১৬ লাখ, আগস্টে ১৭ কোটি ৩১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১১ কোটি ৯৪ লাখ, অক্টোবরে ১৬ কোটি ২৩ লাখ, নভেম্বরে ২৪ কোটি ৩৯ লাখ ও ডিসেম্বরে ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে গত ছয় মাসে আহরণ হয়েছে ৮৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১০ কোটি ৯৪ লাখ, আগস্টে ৯ কোটি ৩১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৪ কোটি ১৬ লাখ, অক্টোবরে ১১ কোটি ৭৯ লাখ, নভেম্বরে ১৮ কোটি ২৬ লাখ এবং ডিসেম্বরে ২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে হিলি স্থলবন্দর থেকে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার বিপরীতে ৭৯ শতাংশের মতো রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে। ঘাটতির কারণ সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন না থাকা। শুধু পাথর আমদানি করে বন্দরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। সব পণ্য আমদানি হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে শুল্কযুক্ত অন্য পণ্য আমদানি না হওয়ার কারণ একই পণ্য বিভিন্ন বন্দরে বিভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন করা। ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোটরপার্টস আমদানি করা হয়, যা ৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। একই পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানির ক্ষেত্রে সেখানে ৩ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। এছাড়া হিলি স্থলবন্দরে কিছু অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব কারণেই বন্দরে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাহিনুর রেজা শাহীন বলেন, হিলি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজেই আমদানীকৃত পণ্য সরবরাহ করতে পারি। বিগত বছরগুলোয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে রাজস্ব আদায় হলেও বর্তমানে হিলি স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি ও বৈরিতার কারণে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোমরা, বেনাপোল ও তামাবিল বন্দর দিয়ে ব্যাপক পরিমাণে ফল আমদানিতে গাড়ির চাকা অনুযায়ী কোনো শুল্ক নির্ধারণের প্রথা নেই অথচ হিলি স্থলবন্দরে তা বিদ্যমান। এসবের পরেও বন্দর দিয়ে কোনো অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলেও পণ্যের পরীক্ষণ ও শুল্কায়নের নামে কালক্ষেপণসহ নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হয়। এ রকম কিছু বৈষম্যের কারণে সম্ভাবনাময় হিলি স্থলবন্দরটি ক্রমাগতভাবে রাজস্ব আহরণে ঘাটতিতে পড়ে যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে আগে ফল, শুঁটকি, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের পার্টস, টায়ার আমদানি হলেও বর্তমানে শুধু পাথর আমদানি হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু খৈলসহ অন্যান্য পণ্য সামান্য পরিমাণে আমদানি হচ্ছে। এসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
হিলি স্থল শুল্কস্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির কারণ হলো স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমে যাওয়া। আগে স্থলবন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির পাশাপাশি বেশ পরিমাণে চাল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে এসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে মূলত রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদি স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্যের আমদানি হয়, তাহলে রাজস্ব আহরণে যে ঘাটতি রয়েছে, সেটি পূরণ হয়ে যাবে।