ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতায় ঝুঁকি দেখছেন ব্যবসায়ীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থায় চাহিদা, জোগান, বেচাকেনার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ভোগ্যপণ্যের দামের ওঠানামা। এতে ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া দেখা যায়। তবে বাংলাদেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামে উত্থান-পতনে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। অনেক সময় যুক্তিহীনভাবে দাম বাড়ে। আবার কিছুদিনের মধ্যেই কমে যায়। ভোগ্যপণ্যের দামে এমন ধারাবাহিকতাবিহীন উত্থান-পতনে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, হঠাৎ কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে কিছু ব্যবসায়ী সাময়িকভাবে লাভবান হন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ প্রবণতা বাজার ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা ওই পণ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে দাম কমে গেলে লোকসান গুনতে হয়।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের জুনে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ পাম অয়েল ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পরে জাতীয় বাজেটে শুল্ক বৃদ্ধি, ধর্মীয় উৎসব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি বুকিং দরের কারণে পণ্যটির দাম মণপ্রতি ৩ হাজার ১৫০ টাকায় উঠে যায়। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী পাম অয়েলে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন। বাড়ান আমদানি। বর্তমানে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম ২ হাজার ৮৫০ টাকার নিচে। দাম আরো কমার শঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ী পণ্যটি থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে চাইছেন। কিন্তু স্লিপ বাণিজ্যের পদ্ধতিগত কারণে ডিও ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে না পারায় বড় ধরনের লোকসান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে পণ্য বেচা-কেনায় মাস টু মাস স্লিপ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। এতে স্লিপ কেনার পর পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামের স্লিপ কিনে বিনিয়োগ করেন। তবে হঠাৎ পণ্যটির দাম কমে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এসব স্লিপ বিক্রি হয় না। ফলে বড় ধরনের লোকসান মেনে নিতে হয় ব্যবসায়ীদের।
ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনি ও মসলার ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত বাজেটের আগে আমদানি করা প্রতি মণ চিনি ১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাজেটে শুল্কারোপের পর তা মণপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকায় উঠে যায়। বর্তমানে পণ্যটি মণপ্রতি ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী দিনগুলোয় চিনির দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে আমদানি করা এলাচ কেজিপ্রতি ৪ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ধারাবাহিকতাহীন উত্থানের পর পরই কমে আসবে মসলাটির দাম। এতেই তৈরি হবে ঝুঁকি।
স্থানীয় ডিও ব্যবসায়ী মুকতাদির আজাদ জানান, পণ্যের দাম বাড়লে বাড়তি মুনাফার আশায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে ডিও ব্যবসায় পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে দীর্ঘমেয়াদে অনেকেই ঝুঁকিতে পড়েন। পণ্যের দাম হঠাৎ কমতে শুরু করলে লোকসানের মুখে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন অনেক ব্যবসায়ী।
গত ডিসেম্বরের শুরুতে লোকসানের মুখে খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী আত্মগোপনে যান। মেসার্স লাকী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজ ডিও সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করলেও লোকসানে পড়ে ব্যবসা ছেড়ে দেন। যদিও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি ফিরে এসে পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, যেকোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি বা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। দ্রুত দরপতন বা মূল্যবৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিতে থাকেন। এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরো বলেন, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক কমে গেলে ডিও ব্যবসায়ী ছাড়াও ব্যাংকের ঋণে পণ্য আমদানিতে থাকা ব্যবসায়ীরাও লোকসানে পড়েন। দাম বাড়তে থাকায় অনেক আমদানিকারক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করেন। কিন্তু আমদানি পণ্যটি দেশে পৌঁছার আগেই স্থানীয় বাজারে দাম কমে গেলে বড় ধরনের লোকসানে পড়েন। এ পরিস্থিতি অর্থ লগ্নিকারী ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এটা বাজারের জন্য ভালো কিছু নয়।