দুশ্চিন্তায় কৃষক : তিন দিনের ব্যবধানে যশোরে তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

0

আকরামুজ্জামান ॥ পৌষের কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। মঙ্গলবার থেকে যশোরে হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এ অঞ্চলে ৫ ডিগ্রিরও বেশি তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ভোর থেকে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে এ অঞ্চলে। আর তাতে বেকায়দায় পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের তাগিদে সকাল থেকে বের হওয়া বিভিন্ন পেশার মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। আবহাওয়া অফিস বলছে আজ বুধবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, গত দেড় সপ্তাহ আগে যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। যা চলে টানা ৫ দিন ধরে। এসময় যশোরে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। তবে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। এরপর শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাওয়ার পর যশোর অঞ্চলের তাপমাত্রার পারদ উপরে উঠতে থাকে। জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করতে থাকে। তবে সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ জানুয়ারি এ অঞ্চলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ার পরপরই আবার কমতে থাকে তাপমাত্রা। গত তিন দিনে যশোরে তাপমাত্রা কমে ৬ ডিগ্রিরও বেশি। আবহাওয়া অফিসের হিসেব মতে, গত ৪ জানুয়ারি যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৫ জানুয়ারি ১৪ ডিগ্রি ও ৬ জানুয়ারি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর পরই গতকাল মঙ্গলবার যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার এ বিস্তর ফারাককে আবহাওয়াবিদরা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছে। তাদের মতে জলবায়ূর বিরূপ প্রভাবের কারণে যশোরসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া এ চরমভাবাপন্ন অবস্থায় চলে যাচ্ছে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাটির আবহাওয়া অফিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। আগামী দুই তিন দিন এ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এক পর্যায়ে এটি হালকা শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। এসময় জনজীবনে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে দ্রুত তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এর বড় প্রভাব পড়ছে জনজীবনের ওপর। সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত এ অঞ্চলে সূর্য দেখা যাচ্ছে খুব অল্প সময়ের জন্য। কুয়াশার পাশাপাশি তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় মানুষ নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরোচ্ছে না। শীতের পোশাক না থাকায় নি¤œ আয়ের মানুষের ভোগান্তির যেনো শেষ নেই। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতার্তদের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
মঙ্গলবার সকালে যশোর উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় কয়েকজন দিনমজুরের সাথে। তারা বলেন, আমরা ভীষন কষ্টে আছি। শীতের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। তারপরও জীবিকারতাগিদে বের হতে হচ্ছে। রিকশা চালক জমির হোসেন বলেন, গত বছর শহরে বিভিন্ন এলাকায় গরীব মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করতে দেখা যায়। কিন্তু এবছর কোথাও তা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বড়লোকরা যদি আমাদের পাশে থাকতে তাহলে আমরা কিছুটা বাঁচতে পারতাম।
আবুল কালাম নামে আরেক ভাটা শ্রমিক বলেন, গতকাল (সোমবার) যশোরে এমন শীত ছিলোনা। সকালে বাড়ি থেকে হালকা কাপড় পরে বের হয়েছি। বাইরে এসে ঠান্ডায় কালায় যাচ্ছি। আগে বুঝতে পারিনি এমন শীত পড়তেছে। তিনি বলেন, শীতে বের হবার উপায় না থাকলেও বের হতে হচ্ছে। ৮ টার মধ্যে খাজুরার একটি ভাটায় গিয়ে কাজে যোগ দিতে হবে।
এদিকে মাত্র দেড় সপ্তাহ বিরতির পর এ অঞ্চলে আবারও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ায় বোরো চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। জেলার সদর উপজেলার ইছালি গ্রামের চাষি হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় আমরা ধানের বীজতলা নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও আমরা নানা প্রযুক্তি অনুসরণ করে আমরা বীজতলা কিছুটা রক্ষা করি। এখন দ্বিতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহের খবরে চিন্তায় আছি ধানের চারার কী পরিস্থিতি হবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার রফদার বলেন, মঙ্গলবার থেকে এ অঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। তবে দেখার বিষয় সামনে গতিবিধি কী অবস্থায় থাকে। সামনে যদি তীব্র কুয়াশা ও শীত পড়ে এবং তা দীর্ঘ হয় তাহলে বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বিলম্বিত না হলে কৃষকের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, যশোরে ৮ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা রয়েছে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ধানের চারা বড় হয়ে গেছে। ফলে এসব চারা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম রয়েছে। বাকি যেগুলো রয়েছে সেসব ক্ষেতকে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের সময় পলিথিং দিয়ে ঢেকে ফেলার জন্য কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।