বে-টার্মিনালে বিশ্বমানের বন্দর

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বহুল কাক্সিক্ষত বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দর পরিণত হবে বিশ্বমানের বন্দরে- এমনটাই ধারণা বন্দর কর্মকর্তা ও ব্যবহারকারীদের। তবে এই বে-টার্মিনালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দীর্ঘদিন। এখনো মাত্র ৫ শতাংশ কাজেই থেমে আছে দেশের অন্যতম এই উন্নয়ন প্রকল্পটি। টার্মিনালটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন দেশের সাতটি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানা গেছে। প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। আগ্রহ প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে আগের সমীক্ষাটি যথেষ্ট না হওয়ায় নতুন করে সমীক্ষা চালাতে হচ্ছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ-সূত্রে জানা গেছে। প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হলেও শেষ হয়নি।
সূত্র জানান, নগরের পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। একে বলা হচ্ছে ‘আগামীর বন্দর’। ৮৭১ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে ওঠা আরও ১ হাজার ৬০০ একরসহ ২ হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে। বে-টার্মিনালের জন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমি এরই মধ্যে অধিগ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের অবশিষ্ট ৮০৩ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি মিলেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি করছে। তবে এ কাজে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড় হবে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ৪৫০ একর জমির ওপর। এ বন্দরে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। নতুন টার্মিনাল হলে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হবে তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। এদিকে ২ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হলেও এ পরিমাণ অর্থ বন্দরের একার পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এটি কারা বাস্তবায়ন করবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যদিও বিদেশি সাতটি প্রতিষ্ঠান বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ), সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, ভারতের আদানি গ্রুপ, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস, চীনের চায়না মার্চেন্টস গ্রুপ ও দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বে-টার্মিনাল কবে হবে বুঝতে পারছি না। সরকারের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্প নেওয়া হলেও দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।’ বে-টার্মিনাল প্রকল্পে নিয়োজিত চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বলেন, ‘প্রকল্পটির মূল কাজ শুরুর আগে নতুন করে সমীক্ষা চালাতে হবে। এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কাজে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর ছিল প্রস্তাব জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরই মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। নতুন সমীক্ষার জন্য সময় ধরা হয়েছে নয় মাস। আর এ কাজের জন্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’ পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এটা শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশের অর্থনীতির জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। কারণ সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে জানানোর পরও বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজে দৃশ্যত অগ্রগতি হয়নি।’ প্রকল্প পরিচালক ও বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিউল আলম বলেন, ‘বে-টার্মিনালে মাটি ভরাট করে ট্রাক টার্মিনাল ও ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে গত ৩০ মে। সেটির অনুমোদন না হওয়ায় মূল কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এখন ৬৮ একর জমি দখলে রাখার জন্য প্রাথমিকভাবে সীমানা দেয়াল নির্মাণ হচ্ছে।’