জাপায় চাপা ক্ষোভ

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। ২৮ ডিসেম্বর নবম কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদ এই প্রথম একা ও কোণঠাসা হয়ে গেলেন। এইচ এম এরশাদ থাকাকালীন পার্টির কাউন্সিল কিংবা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিতেন রওশন এরশাদ। এরশাদের অবর্তমানে নবম কাউন্সিলে অংশ নেননি রওশন। জানা গেছে, পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদটিও তার মনঃপূত হয়নি। এমনকি তার বলয়ে থাকা পার্টির সিনিয়র নেতারাও কো-চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে জি এম কাদেরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায়ও অংশ নিচ্ছেন না বেগম রওশন এরশাদ। এদিকে নবম কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও ছয়জন কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ ছাড়া আট বিভাগে আটজন অতিরিক্ত মহাসচিব নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে পার্টির সিনিয়ারিটি অনুযায়ী কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়নি। শুধু দুটি বলয়ের শীর্ষ নেতাদের মাঝে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আট বিভাগে আটজন অতিরিক্ত মহাসচিব নিয়োগের ক্ষেত্রেও সিনিয়রিটি মানা হয়নি। সব মিলিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে পার্টিতে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলের ঐক্য। দলকে ঐক্যবদ্ধ এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার স্বার্থে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কো-চেয়ারম্যান এবং অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ কমিটি ঘোষণার পর আশা করি কারও ক্ষোভ থাকবে না। বেগম রওশন এরশাদ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। এ ছাড়া তিনি সভা-সমাবেশের ধাক্কাধাক্কি পছন্দ করেন না। আমি তার সঙ্গে শিগগিরই দেখা করব। আশা করছি সুস্থ হয়ে দলে তিনি নিয়মিত হবেন। জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে পার্টির অষ্টম কাউন্সিলে ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে রওশনকে পার্টিতে যথাযথ সম্মান দিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হয়। এ নিয়ে দেবর-ভাবীর মধ্যে দেখা দেওয়া বিরোধও কখনই প্রকাশ্যে আনতে দেননি এরশাদ। নানাভাবে সন্তুষ্ট রেখেছেন স্ত্রী ও ভাই দুজনকেই। এরশাদের মৃত্যুর পর শনিবার দলের প্রথম ও নবম কাউন্সিলে নিজের জন্য তৈরি ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ বা ‘চিফ পেট্রন’ পদ পছন্দ না হওয়ায় এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী মহাসচিব নির্বাচন না করায় ক্ষুব্ধ রওশন সম্মেলনেই এলেন না। সম্মেলনের আগে কোনো সভাতেও অংশ নেননি। রওশন নিজে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। মহাসচিব হিসেবে রাঙ্গার বদলে সৌদি রাষ্ট্রদূত ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহকে মহাসচিব করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু দল তা মেনে নেয়নি। সে জন্য ছেলে সাদ এরশাদকেও পাঠাননি সম্মেলনে। কোনো শুভেচ্ছাও জানাননি। কিন্তু এবার আর সংকট সমাধানে কেউ উদ্যোগ নেননি। এমনকি এতদিন যেসব নেতা রওশনের পক্ষ নিয়ে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার অনুসারী নেতাদের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে এসেছেন, এবার রওশনের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় তারাও। নতুন পদ পেয়ে সম্মেলনে বেশ উৎসাহ দেখা গেছে তাদের। চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে ঘিরেই মূল মঞ্চে দেখা গেছে তাদের। সম্মেলনের পর সব বিরোধ ভুলে সর্বস্তরের নেতাদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে ফুল দিয়ে বরণ করতে দেখা গেছে। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সফল কাউন্সিলের পর আমাদের মাঝে কোনো মতানৈক্য ও বিভেদ নেই। পার্টির সব নেতৃবৃন্দ জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আশা করি এই নেতৃত্বে পার্টি আরও বেশি শক্তিশালী হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সম্মেলনে রওশন এরশাদ না আসায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি থাকলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ব্যানার-ফেস্টুনে রওশনের নাম ও ছবি ছিল না। এরশাদের ছবির পাশাপাশি শোভা পায় জি এম কাদেরের ছবি। এমনকি সম্মেলনে রওশনপন্থি এক নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হলেও ওই নেতা বক্তব্যে সব বিরোধ ভুলে এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে দল চালানোর ঘোষণা দেন। পদোন্নতি পেয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান হওয়া রওশনপন্থি এক নেতা গতকাল বলেন, রওশন এরশাদ সম্মেলনে না আসায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে উনি কমিটি পছন্দ করেননি। সম্মেলনে না আসায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু কিছু করার নেই। দীর্ঘদিন ধরে দলে কোণঠাসা ছিলাম। এখন আর কোনো বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। দল চালাতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।