আমাদের উদ্দেশ্য আরিফের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: হাইকোর্ট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য আরিফুলের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’ সোমবার (২৩ মার্চ) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা। সোমবার দুপুরে শুনানিকালে সাংবাদিক আরিফুলকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চান আদালত। জবাবে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘মামলা করেনি। তবে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি।’
এরপর থানায় দায়ের করা অভিযোগে ডান হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম কীভাবে স্বাক্ষর করলেন, সে বিষয়ে জানতে চান আদালত। এসময় আদালতে উপস্থিত আরিফুল ইসলাম জানান, আমি বাম হাত দিয়ে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছি।’ এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমার বক্তব্য শোনেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমরা কেউই আইনের ঊর্ধে নই।’ তখন আদালত বলেন, ‘ধন্যবাদ, রাষ্ট্রপক্ষের কাছ থেকে যখন এমন কথা বলা হয়, তখন আমাদের ভালোলাগে।’ প্রতিকার চাকমা আদালতকে বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভাগীয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে। অভিযোগটি গ্রহণ করা হবে, নাকি হবে না, সে বিষয়ে কুড়িগ্রামের এসপির সঙ্গে কথা বলেছি।’
তখন আদালত বলেন, ‘যেকোনও সাধারণ নাগরিক বা যে কেউ যখন থানায় অভিযোগ দিতে যাবে, তখন তা অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত করাই তার (ওসি) দায়িত্ব। সেখানে আরিফুল ইসলামের মতো সাংবাদিকের এই অবস্থা (সাংবাদিকের অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ না করা) হলে সাধারণ মানুষের কী হবে? থানায় ফোন করে দিলেও অভিযোগ নিতে হবে। তারপর তদন্ত করে জানাবে কী আছে কী নেই। অভিযোগ গ্রহণ করা তার প্রধান দায়িত্ব। ক্রিমিনাল মামলায় সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওনার (সাংবাদিক আরিফুল) বিচার পাওয়ার ডিমান্ড নষ্ট হবে। আসামিরা এর বেনিফিট পাবে। তখন আরিফুলকে তার নিজের পক্ষে অনেক কিছু প্রমাণ করা নিয়ে কত কাহিনি হবে! ফৌজদারি অপরাধের বিচার এখানে হবে, কোর্ট করবে।’ আদালত আরও বলেন, ‘‘এটা ফৌজদারি অপরাধ, এটা আইনতভাবে এগোবে। এ বিষয়ে বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বেশ ভালো উদ্যোগ নিয়ে বলেছেন- ‘কোনও ব্যক্তির দায় সরকার নেবে না।’ তবে রাতারাতি তো সবকিছু ঠিক হবে না। তাই আমরা এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করছি।’’ এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ৫৬১ ধারার ক্ষমতাবলে এ মামলাটি বাতিল করার ক্ষমতা আপনাদের রয়েছে।’ জবাবে আদালত বলেন, ‘‘৫৬১ ধারা তখনই কার্যকর হবে, যখন কোনও মামলা বিচারিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালে পেন্ডিং থাকবে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত সাধারণ বিচারিক প্রক্রিয়া না। এই মামলায় এত অসঙ্গতি রয়েছে যে, আমাদের আর কিছু করার নেই (আদেশ দেওয়া ব্যতিত)। আমরা রুল জারি করবো, শুনবো। মামলার আইনজীবী অনেক গবেষণা করেছেন। এখানে অনেক ত্রুটি আছে। ১৩ তারিখে (গত ১৩ মার্চ) মামলা শুরু হয়ে পরদিন ১৪ তারিখে (গত ১৪ মার্চ) শেষ হলো, এমনটা আমরা কখনও দেখিনি। তবে আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি। হারুক-জিতুক আরিফুল যেন বলতে পারে— ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’ আরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে— মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে, কিন্তু মাদক সেবনের কথা বলা হয়নি। তার বিরুদ্ধে সেবনের কোনও অভিযোগ নেই। অথচ অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও মাদক সেবনের অভিযোগে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই মামলা নিয়ে আমরা অনেক সব নথি, তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করেছি এবং এখন আদেশ দিচ্ছি।’’
এরপর আদালত তার আদেশে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আরিফুল ইসলামের করা অভিযোগপত্র অনুসারে কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও সহকারী কমিশনার এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ মামলা গ্রহণ করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেওয়া সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘেষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

Lab Scan