যশোরে আদালতের হাজতখানা, যে প্রশ্নের সুরাহা হয় না

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ যশোরের আদালত প্রাঙ্গণে এক মানবিক সংকটের নীরব সাক্ষী হাজতখানা। এখানে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে যারা পুলিশি হেফাজতে আসে অথবা আত্মসমর্পণ করে জামিন পান না, তাদের দুপুরের খাবার নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এক অনিশ্চিত চিত্র। কে দেবে এই আসামিদের খাবার? আদালত কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন, নাকি কারা কর্তৃপক্ষ? যুগের পর যুগ ধরে এই প্রশ্নের কোনো সুরাহা না হওয়ায় অনেক নিরপরাধ মানুষও হাজতখানায় অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

যশোর আদালতের হাজতখানার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য জানান, কারাগার থেকে যারা নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন, তাদের খাবারের সমস্যা হয় না। কারণ কারা কর্তৃপক্ষ তাদের দুপুরের খাবার দিয়ে পাঠায়। সমস্যা হয় তাদের নিয়ে, যারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিন নামঞ্জুর হয়, অথবা বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ যাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। এই আসামিদের আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়, কখনো কখনো সন্ধ্যাও গড়িয়ে যায়। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের জন্য দুপুরের খাবারের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। পুলিশ বা আদালত, কেউই এর দায়িত্ব নেয় না।

ওই পুলিশ সদস্যের ভাষ্যমতে, মানবিক কারণে পরিবারের সদস্যরা খাবার নিয়ে এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা সেগুলো পরীক্ষা করে আসামিদের খেতে দেন। কিন্তু যাদের কোনো স্বজন খাবার নিয়ে আসে না, তাদের অভুক্তই থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বজনদের আনা খাবারও আসামিদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী এ প্রতিবেদককে আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এবং আদালতের পুলিশ পরিদর্শক রোকসানা খাতুন জানিয়েছেন, এটা একটি মানবিক সমস্যা। সমস্যার সমাধানের জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই ধরনের আসামীরা কারাগারের রেজিস্টারভুক্ত নন, কাজেই আদালতের হাজতখানায় খাবার সরবরাহের দায়িত্ব তাদের নয়।