ঝড় ও শিলা বৃষ্টি যশোরাঞ্চলের ৬ জেলায় বোরো উৎপাদন কমাল, লক্ষ্য পূরণে সংশয়

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত যশোরসহ ৬ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলে এবার ১৭ লক্ষাধিক মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফসল ঘরে তোলার মুখে একের পর এক শিলাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রার উপর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

যশোরে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের অধীনে যশোরসহ মোট ৬টি জেলা রয়েছে। এটিকে যশোরাঞ্চল বলা হয়। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এসব অঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন ধান কাটার মহোৎসব চলছে। কৃষাণ-কিষাণী কারও ফুরসৎ নেই এক মুহূর্তও। উঠানে পুঞ্জিভূত সোনালি ধানের স্তুপ শিহরণ জাগিয়েছে কৃষকহৃদয়ে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে থেকে এ অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। তবে গত সপ্তাহে দুই দফা শিলাবৃষ্টিতে এ অঞ্চলের বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শীষ থেকে ধান মাটিতে ঝরে পড়ে। এরমধ্যে আবার আগাম ধানে চিটা হওয়ায় ফলন কম হয়েছে বলে জানান কৃষ । তবে যারা সময়মতো ধান লাগিয়েছিলেন তারা বিঘাপ্রতি গড়ে ২৫/৩০ মণ করে ধান পাচ্ছেন। এই উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বিঘাপ্রতি ২/৩ মণ করে বেশি বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার দশপাখিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আবু তালেব গাজী। তিনি এবার ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। বাংলামতি জাতের ধানে প্রতি বিঘায় তার উৎপাদন টার্গেট ২৫ মণেরও বেশি বলে তিনি জানান।’ তবে সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় লাভ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

ওই এলাকার কৃষকরা জানান, এবার অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধান চাষ করেছে তারা। মৌসুমের শুরুতেই সার সংকট। চড়া দামে সার কিনতে হয়েছে কৃষককে। এরপর সেচ মৌসুমে শুরু হয় তীব্র লোডশেডিং।

জ্বালানিতেলের দামও বাড়তি ছিলো। কিন্তু প্রকৃতি ছিল বোরো চাষের অনুকূল। ফলে নিকট অতীত যেকোনো সময়ের চেয়ে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বটে। তবে শেষ সময়ে ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

চৌগাছার সিংহঝুলি ইউনিয়নের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘এবছর বোরো আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। তবে গত সপ্তাহে শিলাবৃষ্টিতে ধানের সর্বনাশ করে গেছে। এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬মণ ধানও পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।’

একই কথা বলেন, জেলার সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন। তিনি বলেন, মাত্র কয়েক দিন সময় পেলে নির্বিঘ্নে ঘরে ধান তুলতে পারতাম। কিন্তু শেষ সময়ে শিলাবৃষ্টিতে সর্বনাশ করে ফেলেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তারা উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আবু তালহা বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে সার সংকট দেখা দিলেও সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে তা তীব্র রূপ নিতে পারেনি। বিদ্যুৎ সংকটের কথা অস্বীকার না করে তিনি বলেন, এতে ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়াজনিত ক্ষতির পরিমান জেলায় ৯ হাজার ৪০১ হেক্টর জমি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় এবার তিন লাখ ৮১ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষ হয়েছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বরাবরের মতো যশোর জেলায়ই সবচেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।

এ জেলায় এবার বোরো চাষের আওতায় এসেছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। আর সবচেয়ে কম ১৯ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহে ৯০ হাজার ২৮০, মাগুরায় ৩৯ হাজার ৫৩০হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৩৩ হাজার ৯৯৬হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় ১৯ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। এ অঞ্চলে এবার ১৭ লক্ষাধিক মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে বলে কৃষি কর্মকর্তাদের আশা। তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে এর সংখ্যা কমতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলমগীর বিশ্বাস বলেন, যশোরাঞ্চলের ৬ জেলায় বোরোর ক্ষতির পরিমাণ ২৩৬৫ হেক্টর। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যশোর জেলায়। বাকি জেলায় তেমন ক্ষতি হয়নি।

এ বছর যশোরাঞ্চলের ৬ জেলায় নিকট-অতীত যেকোনো সময়ের তুলনায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যায় কৃষক শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলে লাভের মুখ দেখবেন।’