যশোরে সাদিকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে খুন করে দুই জন, আটক নেই

বাড়ির মধ্যে ঢুকে গুলি ও ছুরিকাঘাত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের রেলবাজারের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত প্রাণ গেলো ইজারাদার মীর সামির সাকিব সাদিও (৩৫)। গত সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের মুজিব সড়ক রেলগেট মসজিদ মহল্লার বাড়ির ভেতর ঢুকে সাদিকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণও করে। পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান সাদি।

স্থানীয়দের ধারনা, রেল বাজারের ব্যবসায়ীরারা যে সব চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীর কবল থেকে মুক্তি চেয়েছিল তারাই ইজারাদার সাদি খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। সাদি খুনের সাথে মেহেদী ও ট্যাটু সুমন নামে দুই সন্ত্রাসীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তবে গতকাল পর্যন্ত তাদেরকে আটক করতে পারেনি।

নিহত সাদি মুজিব সড়ক রেলগেট মসজিদ মহল্লার মীর শওকত আলীর ছেলে। সাদির সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তার চাচাতো ভাই রাকিব। তিনি জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মোটরসাইকেলের পেছনে বসে বাড়িতে আসেন সাদি। বাড়ির উঠানে মোটরসাইকেল থেকে নামার সাথে সাথে আচমকা সেখানে এসে হাজির হয় সন্ত্রাসী মেহেদী ও ট্যাটু সুমন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাকু নিয়ে সাদির ওপর চড়াও হয় মেহেদী। ট্যাটু সুমনও পিস্তল বের করে। সাদিকে রক্ষার জন্য রাকিব দুই জনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে থাকেন।

এরই মধ্যে মেহেদী চাকু দিয়ে সাদির বুকে গলায়সহ কয়েকটি স্থানে আঘাত করে। তখন ট্যাটু সুমন পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে এবং পরে দুই সন্ত্রাসী দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর তারা গুরুতর জখম সাদিকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সাদিকে চিকিৎসক খুলনায় রেফার করে। সাথে সাথে সাদিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

পথে যশোর শহরের বকচওে আইটি পার্কের সামনে পৌঁছালে মারা যান সাদি।

রাকিব বলেন, সাদির কাছে বিভিন্ন সময় টাকা চাইতো মেহেদী ও ট্যাটু সুমন। কিন্তু সাদি তাদের টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ কারণে হয়তো সন্ত্রাসীরা সাদিকে হত্যা করেছে।

ময়নাতদন্তের পর যশোর মেডিকেল কলেজের ফরসেনিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবলু কিশোর বিশ্বাস জানান, ছুরিকাঘাতের কারণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতের পিতা মীর শওকত আলী জানান, তার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। দুই সন্তানের মধ্যে সাদি ছোট। তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। রেলবাজারের ইজারাদার ছিলো। গত সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সাদি। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে চাচাতো ভাই রাকিবের সাথে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে আসে সে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা এসে তার ছেলেকে খুন করেছে। রাকিব সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে গিয়ে ইট দিয়ে তাদের আঘাতও করেছিলো। কিন্তু সাদিকে রক্ষা করতে পারেনি। মীর শওকত আলী আরো জানান, সন্ত্রাসীদের সাথে সাদির কোনো বিরোধ ছিলো কিনা তা তার জানা নেই।

স্থানীয় একটি স্থাপনার সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে করে সাদিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রাকিব। তাদের পেছন পেছন দৌড়ে যাচ্ছে মেহেদী ও ট্যাটু সুমন। এরপর শোনা যায় গুলির শব্দ ও চিৎকার। কিছুক্ষণ পর ওই সন্ত্রাসীরা আবার ফিরে আসছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানান, সাদিকে কী কারণে খুন করা হয়েছে তা তারা এখনো জানতে পারেননি। তবে খুনের সাথে জড়িত সন্ত্রাসী মেহেদী ও ট্যাটু সুমনকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। তাদেরকে আটকের জন্য অভিযান চলছে।

তিনি আরও জানান, কোতয়ালি থানায় সন্ত্রাসী মেহেদীর বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, বিস্ফোরক, মাদক ও অস্ত্র আইনের মামলাসহ মোট ১৫টি মামলা রয়েছে। অপর সন্ত্রাসী ট্যাটু সুমনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরকও মাদকের মামলাসহ মোট ১৪টি মামলা রয়েছে।

ডিবি পুলিশের এসআই খান মাইদুল ইসলাম রাজিব জানান, রেলবাজারকে নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে হয়ত সাদিকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা।

রেলবাজার এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, সাদি হত্যায় অভিযুক্ত মেহেদী শংকরপুর আশ্রম রোড মহিলা মাদ্রাসার পেছনের আলী মিয়ার ছেলে এবং ট্যাটু সুমন বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার ডাকাত হিসেবে কুখ্যাত মৃত শহিদুল ইসলাম বাবু ওরফে কানা বাবুর ছেলে।