কেশবপুরে পাহাড়ী ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

0

জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর)॥ যশোরের কেশবপুরে খ্রিস্টান মিশনারিতে এক আদিবাসী স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই মিশনারি ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। মঙ্গলবার সকালে কেশবপুর শহরের সাহাপাড়ার ওই মিশনারি ঘেরাও করে তারা বিক্ষোভ করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর সঠিক রহস্য উন্মোচন করার দাবি জানান। এদিন দুপুরে ওই মিশনারি থেকে তিন আদিবাসী ছাত্রীকে পুলিশের মাধ্যমে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। মৃত ছাত্রীর পিতার দেওয়া অভিযোগকে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে পুলিশ।

শুক্রবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মৃত অবস্থায় রাজেরুং ত্রিপুরা (১৫) নামে আদিবাসী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজেরুং ত্রিপুরা কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী । সে বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের রমেশ ত্রিপুরার মেয়ে। রাজেরুং ত্রিপুরা কেশবপুর শহরের সাহাপাড়ার খ্রিস্টান মিশনে থেকে পড়াশোনা করতো।

পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের পর খ্রিস্টান মিশনে গেলে কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজেরুং ত্রিপুরা তার শয়নকক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

পুলিশ ও খ্রিস্টান মিশনারি সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর সাহাপাড়ার খ্রিস্টান আউটরিচ সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে ৪৪ জন আদিবাসী কিশোরী ওখানে থেকে পড়াশোনা করে। এদের মধ্যে স্কুলছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরাও ছিল।

এদিকে ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই গুঞ্জন উঠে, তাকে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এরপর এ ঘটনায় সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ওই মিশন ঘেরাও করে। সে সময় মৃত স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যসহ অন্য তিন আদাবাসী স্কুলছাত্রীর পরিবারের স্বজনেরা ওই মিশনে হাজির হন। তাদের দাবির মুখে মিশনে থাকা তিন স্কুলছাত্রী রেবিকা ত্রিপুরা, জেসিন্তা ত্রিপুরা ও স্বস্তিকা ত্রিপুরাকে পুলিশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।

ওই খ্রিস্টান মিশনারির পরিচালক ক্রিস্টফার সরকার বলেন, ওই মেয়েটিকে তার নিজের শয়নকক্ষ থেকে জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কোন ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। মিশনে থাকা তিন ছাত্রীর পরিবারের দাবির কারণে পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের নিকট তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, মৃত ছাত্রীর পিতা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মনিরামপুর-কেশবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমদাদুল হক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মিশন ঘেরাও করে বিক্ষোভের বিষয়ে জেনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মৃত ছাত্রীর বাবার অভিযোগ কেশবপুর থানা পুলিশ পেয়েছে।

ওই অভিযোগের সূত্র ধরে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে। এ ছাড়া ওই মিশনের তিন ছাত্রীকে তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে।