চারবারের চেষ্টায় সহকারী জজ আয়েশা

0

ইবি সংবাদদাতা॥ স্বপ্নকে ছুঁতে পাহাড়ের মতো অটল থাকলে, দারিদ্রতা বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আর যেখানে থাকে প্রিয়জনদের প্রেরণা, সেখানে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেবেই। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আয়েশা। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন। অর্থাভাবে কলেজে ভর্তির আগেই স্থগিত হচ্ছিলো আয়েশার শিক্ষাজীবন। তার মা গহনা বিক্রি করে তার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন।

মা ছাড়াও তার স্বামী হাফেজ তাওহিদুল ইসলাম তাকে সাহস, মনোবল ও উৎসাহ দেন। প্রিয়জনদের প্রেরণায় টানা তৃতীয়বার ব্যর্থ হয়ে চতুর্থবারে ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় তিনি সহকারী জজ হিসেবে নির্বাচিত হন। যারা দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে অস্থির তাদের অনুপ্রেরণার স্বপ্নের সারথি হতে পারেন আয়েশা।

আয়েশা জানান, সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষা সন্দেহাতীতভাবে একটি কঠিন পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর জীবনের যত অপ্রাপ্তি ও ব্যর্থতার কষ্ট ছিল তা দূর হয়েছে। তবে এই সফলতায় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হতেন আমার পিতা যিনি এ পৃথিবীতে এখন আর নেই।

আয়েশার জন্ম ১২ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে। বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার বয়ড়াবাড়ী গ্রামে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার দেওয়ার পর পিতা মারা যান। ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর টাকার অভাবে কলেজে পড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরে মায়ের গহনা বিক্রি করে রাজশাহী নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তির অর্থ দিয়ে কলেজে লেখাপড়া চলে। ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১৫-১৬ বর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সুযোগ পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শুরু হয় টিকে থাকার নতুন লড়াই। সেন্ট্রাল ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেএম) বৃত্তির সহায়তায় তিনি সিজিপিএ ৩.৪৪ পেয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

তিনি বলেন, আব্বা-আম্মার পরিশ্রম, সততা, দূরদর্শিতা, ধৈর্য -সবকিছুই আমার বিচারক হওয়ার পেছনে অবদান রেখেছে। আম্মা বলতেন প্রয়োজনে রক্ত বিক্রি করে তোমাকে পড়াবো।তুমি হাল ছেড়ো না। ২০২০ সালে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ার সময়ে তার বিয়ে হয়। তখন থেকেই জজ হওয়ার জন্যে প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।