অযাচিত বিতর্ক দেশবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেবে : তারেক রহমান

খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে

0

মো. জামাল হোসেন,খুলনা ॥ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার নিয়ে অবান্তর আলোচনা করে মূল কাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক করে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে এমন কোনো পরিস্থিতি উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি আবারও সুযোগ পায়।

গতকাল সোমবার খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। সকাল থেক্ইে নানা আনুষ্ঠানিকতায় কর্মসূচি শুরু হয়। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে এজন্য বসে থাকলে চলবে না। নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ আমাদেরকে আবারও সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি।

রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রুপরেখা ৩১ দফাতে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পসহ সব সেক্টরে বিএনপি কাজ করবে। যুক্তরাজ্যে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে সেই জায়গায় পৌছাতে তাদের ৭৭ বছর লেগেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেই ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, স্বৈরাচার আমাদেরকে খাদের কিনারে পৌঁছে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষ প্রায় সবাই নির্যাতিত ছিল। মিথ্যা মামলা, গুম, খুন দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। চোদ্দশ মানুষ শহীদ হয়েছেন মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে দরকার স্থিতিশীলতা।

নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দলে যতো বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করা হবে ততো ভালো মানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একই ভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্”া হলে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনাতে। অনেক বছর পরে আবারও খুলনায় কাউন্সিলে থাকতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারেক রহমান।

এর আগে সকাল সোয়া ১০ টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন, নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, বিএনপি নেতা কেএম হূমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল, কাজী মিজানুর রহমান সৈয়দা রেহানা ঈসা প্রমুখ।

সম্মেলন পরিচালনা করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যশোর জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোরজেুল ইসলাম, সাবেক এমপি শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন, সাংবাদিক নেতা আমিরুল ইসলাম কাগজী।

সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা। শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন মাওলানা ফারুক হোসাইন। গীতা পাঠ করেন সত্যানন্দ দত্ত।
খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন

পরে খুলনা জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে অ্যাডভোকটে শফিকুল আলম মনা সভাপতি এবং শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদে শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু ও হাসানুর রশিদ মিরাজ নির্বাচিত হয়েছেন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা করেন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকটে শফিকুল আলম মনা ২৯৯ ভোট, তরিকুল ইসলাম জহির ১৮৯ ভোট এবং সাহাজি কামাল টিপু ৩ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল আলম তুহিন ২৮৮ ভোট, নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর ২০৩ ভোট এবং কাজী মাহমুদ আলী ২ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে। কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থীর মধ্যে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সাদী ৩৭০ ভোট, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ পারভেজ বাবু ২৬০ ভোট এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসানুর রশিদ মিরাজ ২৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু ১৭৬ ভোট, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু ১০৬ ভোট এবং সাবেক যুবদল নেতা তারিকুল ইসলাম তারেক ৭৮ ভোট পান। ৪টি ভোট বাতিল করা হয়েছে।

২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এবং পরে ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড, তিনটি ইউনিয়ন ও পাঁচটি থানায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর।