ঝিনাইদহে শতকোটি টাকার ৯১০ বিঘা খাস জমি বেদখল

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহে প্রায় শত কোটি টাকার ৯১০ বিঘা সরকারি খাস জমি প্রভাবশালীদের জবর দখলে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় এ ভূসম্পত্তি দখলমুক্ত করতে কার্যত সরকারি কোন উদ্যোগ নেই। বরং উদ্বেগজনক হারে ঝিনাইদহে ভূসম্পত্তি জবরদখলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি জমি দখলের দিক থেকে মহেশপুর উপজেলা এগিয়ে রয়েছে। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী মহেশপুর উপজেলায় প্রায় ১২ শ (৪০২.২৯ একর) বিঘা সরকারি খাস জমি বেদখলে রয়েছে।

এরমধ্যে মহেশপুরের কানাইডাঙ্গা মৌজায় সড়ক বিভাগের প্রায় ৩৭ বিঘা জমি উল্লেখযোগ্য। প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় এ সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। সরকারি এসব খাস জমি কোটি কোটি টাকা দিয়ে কিনে প্রভাবশালী প্রভাবশালীরা শিল্পকারখানা স্থাপন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূসম্পত্তি জবর দখল বিষয়ে গঠিত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং কমিটির রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সর্বমোট ১৪০২.৮ (৪৬৭.৬০ একর) বিঘা সরকারি খাস জমি বেদখলে ছিল। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২৫.৩৫ একর, শৈলকুপায় ১৭.১০ একর, হরিণাকুন্ডুতে ৫.৯৯ একর, কালীগঞ্জে ১০.১৫ একর, কোটচাঁদপুরে ৬.৭২ একর ও মহেশপুর উপজেলায় ৪০২.২৯ একর ভূসম্পত্তি প্রভাবশালীদের দখলে আছে। ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দপ্তর উদ্ধার করতে পেরেছে মাত্র ১৬৪.৪০ একর জমি। বাকি ৩০৩.৪০ একর জমি উদ্ধার হয়নি। মাসের পর মাস ভূসম্পত্তি জবর দখলের বিষয়ে গঠিত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং কমিটির সভা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী অফিসাররা মাসিক সভায় কোন উত্তর দিতে পারেন না।

তবে লোকবল ও পুলিশি সহায়তার অভাবে এসব সরকারি খাস জমি উদ্ধার হয় না বলে প্রশাসনে কথিত আছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভূসম্পত্তি জবর দখল বিষয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটির সভায় ঘুরে ফিরে একই তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত সভায় উদ্ধার না হওয়া জমির পরিমাণ ছিল ৩০৪ একর। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মনিটরিং কমিটির সভায়ও একই ফিগার দেখানো হয়। ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মনিটরিং কমিটির সভায় উদ্ধার না হওয়া খাস জমি দেখানো হয় ৩০৩.৪০ একর। অর্থাৎ তিন মাসে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ০.৭৭ শতক জমি। এদিকে মহেশপুর উপজেলায় উদ্ধার না হওয়া ৪০২.২৯ একর সরকারি খাস জমির তথ্যে কোন হেরফের নেই। মাসের পর মাস পার হলেও মহেশপুরে সরকারি এসব খাস জমি উদ্ধারে শক্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে বিনা বাধায় এসব জমিতে স্থাপনা ও শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। বিশেষ করে ১৯৬৭ সালে অধিগ্রহণকৃত ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের ৩৭ বিঘা জমি ৮২ জনের নামে আরএস রেকর্ড হয়ে গেছে। অথচ মহামূল্যবান এই ভূসম্পত্তি ১/১ খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ার কথা।

মহেশপুরের ফতেপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৬৭ সালে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়ক নির্মাণের জন্যে কানাইডাঙ্গা মৌজায় ৩৭ বিঘা (১২.৪৪ একর) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সে সময় জমির মালিকদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হলেও তারাই সরকারি এই সম্পত্তি দখল করে নিজেদের নামে আরএস রেকর্ড করে নিয়েছেন। এখন ওই সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিনা বাধায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর ফতেপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ২৫ জন দখলদার চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার, দখরদারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা ও রেকর্ড সংশোধনের জন্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কাছে ২০২৩/২৫৭ নং স্মারকে চিঠি দেন। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ওই ভূসম্পত্তি দখলমুক্ত করতে পারেনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও রেকর্ড সংশোধন না হওয়ায় সওজের ওই জমি কেনাবেচার মাধ্যমে হাত বদল হচ্ছে। বিক্রিত জমিতে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

এদিকে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগও নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। জমি উদ্ধারে তাদেরও কোন তৎপরতা নেই।

সওজ বিভাগের সার্ভেয়ার জানান, তারা দখলদার চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বকুল চন্দ্র কবিরাজ শুক্রবার জানান, সরকারি ভূসম্পত্তি দখলমুক্ত করতে আমরা প্রতি মাসেই কিছু না কিছু জমি উদ্ধার করছি। তবে সেটা সন্তোষজনক হচ্ছে না। তিনি বলেন, খাস জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। উচ্ছেদের মাধ্যমে ভূসম্পত্তির ওপর সরকারি দখল কায়েম করার জন্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নির্দেশনা দেওয়া আছে।