সহপাঠীদের দাবি, ভাইরাল হতেই নিখোঁজ হওয়ার নাটক করেন সজীব!

0

যবিপ্রবি সংবাদদাতা॥ নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সজীব হোসেনকে বুধবার উদ্ধার করে যশোর জেলা পুলিশ। পুলিশ বলছে অপহরণ বা গুম নয়, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধু নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। এসময় তিনি তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠীদের দাবি, ভাইরাল হতেই এমন কান্ড ঘটিয়েছেন সজীব। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বুধবার রাত ৯টার দিকে যশোর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সজীব উদ্ধারের তথ্য জানানো হয়। সজীব হোসেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখার যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গত নভেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৯ টার পর থেকে সজীব হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে সজীবকে যবিপ্রবির ছাত্রদল নেতা দাবি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত যবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতায় ৮ জানুয়ারি রাতে সজীবকে তার বন্ধুর বাসা থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবারের জিম্মায় দেয় পুলিশ।
এ ঘটনাকে ভাইরাল হওয়ার নাটক বলে দাবি করে তার বন্ধু ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, সজিব ভাইরাল হওয়ার জন্যে আত্মগোপন করে। ও যখন আমাকে ম্যাসেজ দেয় ‘তুই কই? আমার সাথে একজন খারাপ ব্যবহার করছে, তিন-চার জন ছেলে হাতে ছুরি আছে।’ তারপরে ওকে কেউ অ্যাটাক করে ও দৌড়ানি দেয়। পরবর্তীতে এক বন্ধুর কাছে চলে যায়। আমার কথা, রাত নয়টার পর থেকে পরের দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সে আমাকে জানালো না কেনো যে সে সেইভ আছে, ভালো আছে। ও যেখানে ছিল অবশ্যই ফোন ছিল। ওর জন্যে আমি সারারাত-দিন শিক্ষক, ডিএসবি, এনএসআই, পুলিশ, বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি আমাকে ব্যবহার করে নিজেকে ভাইরাল করার জন্যে আত্মগোপন করেছে সজীব।
এদিকে এ ঘটনাকে প্রতারণা বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সজীব যে বিতর্কিত কাজটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে হাইলাইট হওয়ার জন্যে বাজেভাবে ব্যবহার করেছে।
এ ঘটনা জানতে সজীব হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
যশোর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের বিবৃতিতে বলা হয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোতয়ালি থানার চুড়ামনকাটির বাগডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ মো. সজীব হোসেনকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ব্যক্তিগত কারণে তার এক বন্ধু চুড়ামনকাটির নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে ফোন বন্ধ করে রাত থেকে অবস্থান করছিলেন তিনি। তাকে উদ্ধার করে জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার বোন মোছা. লাবনী খাতুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জিম্মায় বুঝিয়া দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, সজীবের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পেরে আমি যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেছিলাম। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করলে আমরা এসপি অফিসে যাই। পরে আমাদের ও তার আপন বোনের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।