সীমান্তের কুখ্যাত বাদশা গ্রেফতার হলেও তার সহযোগীরা অধরা

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের শার্শা- বেনাপোল অঞ্চলের অপরাধ জগতের কিং বাদশা মল্লিক ওরফে বাদশা মিয়া গ্রেফতারের পর গা ঢাকা দিয়েছে তার সশস্ত্র সহযোগীরা। তবে তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে দৈনিক লোকসমাজে সংবাদ প্রকাশের মাত্র চারদিনের মাথায় মোস্ট ওয়ান্টেড বাদশা গ্রেফতার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

তারা বলছেন, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বাদশা শীর্ষ চোরাচালানি ও ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ তিনি বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত ঘাট দিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, নেতা ও সন্ত্রাসীদের ভারতে পলায়নের সুযোগ করে দিয়ে আলোচনায় আসেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি আলোচিত বাদশার। বুধবার সন্ধ্যায় (২ অক্টোবর) সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি তাকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে এতোদিন পুলিশের নীরবতা পালন নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী। দুই যুগেরও বেশি সময় অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন দুর্ধর্ষ বাদশা মিয়া। শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামে তার বাড়ি। পিতা কেরামত মল্লিক পেশায় কৃষক। দরিদ্র পিতামাতার লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা থাকলেও স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি বাদশা।

এক সময় মরণ নেশা ফেনসিডিলের ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি। শার্শা ও বেনাপোল সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে তার হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসতে থাকে। দুর্নীতিবাজ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশের কারণে কখনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। তার কালো টাকার মোহে সকলেই ছিলেন নীরব। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাদশা তার অবৈধ ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন।

সোনা, আগ্নেয়াস্ত্র, ডলার, হেরোইন, হুন্ডি, ফেনসিডিলসহ ভারতীয় পণ্য পাচারের মাধ্যমে তিনি টাকার পাহাড় গড়েন। তবে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীনের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার পর বাদশা ধারণ করেন ভয়ংকর রূপ। শার্শার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের মানুষজনের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এমনকি বাড়িছাড়া করার জন্যে এমপি আফিল বাদশা বাহিনীকে ব্যবহার করেন। ধুরন্ধর বাদশাও সুযোগ বুঝে বেনাপোলের আলোচিত ঘিবাসহ মোট চারটি সীমান্ত ঘাট নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। ফলে আরও জোরদার হয় তার চোরাচালান ব্যবসা।

এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ভাগ্য খুলে যায় শীর্ষ অপরাধী বাদশা মিয়ার।

সূত্র মতে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর তার দলের মন্ত্রী, এমপি, বিভিন্ন স্তরের নেতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বেসামাল হয়ে পড়েন। তারা দেশ থেকে পালাবার পথ খুঁজতে থাকেন। এজন্যে সীমান্ত পথকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বেছে নেন তারা। যদিও এই সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি বেনাপোলের চার সীমান্ত ঘাটের মালিক বাদশা। তিনি লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘিবাসহ অন্য ঘাটগুলো দিয়ে এমপি শেখ আফিল উদ্দীন, এমপি কাজী নাবিল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক লোকজনকে ভারতে পলায়নের সুযোগ করে দেন। বিষয়টি নজরে আসে বহুল প্রচারিত দৈনিক লোকসমাজের। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর পত্রিকাটি বাদশার বিরুদ্ধে বিস্তারিত সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। বস্তুনিষ্ঠ এ সংবাদটি বাদশার জন্যে ছিল একরকম বজ্রাঘাত।

সংবাদটিপ্রকাশের পর তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসনসহ গোয়েন্দারা। বাদশাও গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেন।

সূত্র বলছে, বাদশা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও তার শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় বিজিবির বিশেষ একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। বিজিবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যশোর ব্যটালিয়ানের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বাদশা মিয়া রঘুনাথপুর সীমান্তে অবস্থান করছেন। এমন তথ্য পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রঘুনাথপুর সীমান্তে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং সীমান্তের কোদলারহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাফিয়া ডন খ্যাত বাদশার সাথে ভারতের বস গৌতম, রবিউল, আজগার, নাসির, অপু সাহাসহ অনেকের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। এদের মাধ্যমে বাদশা সোনা, ডলার, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। তিনি অপরাধমূলক ১৫টির অধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ রাজনীতিক, দেশদ্রোহী, অর্থ পাচারকারীসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সন্ত্রাসীদের টাকার বিনিময়ে ভারতে পলায়নের সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল বাদশা সিন্ডিকেট। জিজ্ঞাসাবাদের পর বাদশাকে থানায় হস্তান্তরের কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে বহুল আলোচিত বাদশা গ্রেফতার হওয়ায় বিজিবির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে বাদশা সম্পর্কে নানাজনে নানা মন্তব্যও করছেন। তারা ক্ষোভের সাথে প্রশ্ন রাখেন, এতোদিন ভয়ংকর বাদশা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন কীভাবে? দেড় ডজন মামলার আসামি হলেও থানা পুলিশ কেন তাকে আটক করেনি?