যশোর আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায়?

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পলায়নের খবর প্রকাশের পর সময় নষ্ট করেনি যশোর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। নির্যাতন নিপীড়ন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও কালো টাকার সাথে জড়িত নেতারা ওই দিনই গা ঢাকা দেয়। এখনো পর্যন্ত তাদের কেউই প্রকাশ্যে আসেননি। সাঙ্গপাঙ্গদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে থাকলেও আত্মগোপানেই থেকে গেছেন নেতৃত্বস্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট-বড় মিলে যশোরের কয়েকশ’ আওয়ামী সন্ত্রাসী গা ঢাকা দিয়েছে। শহরের পাড়া-মহল্লায় মাস্তানির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। ডাকসাইটের আওয়ামী লীগের নেতারা এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। সময় যত গড়াচ্ছে তারা স্থান বদল করতে করতে বেশি নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় দেশান্তরি হচ্ছেন। স্বল্প পরিচতিরা বন্দর ব্যবহার করলেও মার্কামারারা চোরাগুপ্ত পথ ব্যবহার করছেন। আবার কোন কোন নেতা নিজেদেরকে আড়াল করতে পরিচিত জনদের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাওয়ার তথ্য প্রচার করছেন।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের দাপটশালীরা এখন দৃশ্যের বাইরে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, কাজী নাবিল আহমেদ, শার্শার শেখ আফিল উদ্দীন, বাঘারপাড়ার রণজিৎ কুমার রায়, স্বপন ভট্টাচার্য ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন বলে খবর রটেছে। তবে এসব খবরের সাথে গোয়েন্দা সূত্রের খবরের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত বিতর্কিত কাউন্সিলর হাজী আলমগীর হোসেন সুমন, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলার ক্ষমতাচ্যুত চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহিত কুমার নাথ, বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুলসহ অনেকেই বারবার ঠিকানা বদল করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এসব নেতাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। এরমধ্যে দলটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ৫ আগস্ট যশোরেই অবস্থান করছিলেন। ওইদিন বিকেলের পর তার দেখা মেলেনি। চাউর আছে তিনি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন। অন্য একটি সূত্র বলছে, অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে শাহীন চাকলাদার চোরাই পথে ভারতে গেলেও তার স্ত্রী ও সন্তানরা বিমানযোগে ভারতে গেছেন। তবে এই মুহূর্তে তাদের অবস্থান কোথায় সেটি কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশ ত্যাগের খবর প্রচার করে শাহীন চাকলাদার নিজ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।

শার্শার সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লেও গোয়েন্দা সূত্রগুলো এটি মানতে নারাজ। গোয়েন্দাদের দাবি শেখ আফিল উদ্দীন দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। মূলত তিনি এখনো ঢাকায় আত্মগোপনে আছেন। শেখ আফিল উদ্দীনের ঘনিষ্টজনদের সূত্রে জানাগেছে, তিনি হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি ব্যবসায়ীক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সে কারণে ধারনা করা হচ্ছে তিনি দেশের অভ্যন্তরে আছেন।

আরেক প্রভাবশালী সাবেক এমপি রণজিৎ কুমার রায়ের বিষয়ে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও সেটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রণজিৎ রায়ের ঘনিষ্টজনরা জানাচ্ছেন গণ-অভ্যূত্থানের পরদিন ৬ আগস্ট তিনিসহ তার বড়ছেলে রাজিব রায় চোরাই পথে ভারতে চলে যান। আর ছোট ছেলে সজিব রায় ও স্ত্রী নিয়তি রায় দেশেই আত্মগোপনে আছেন। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, রণজিৎ রায় এখনো দেশে আছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি দেশ ছাড়ার সুযোগ খুঁজছেন।

এর বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যুবলীগ নেতা মোস্তফা ফরিদ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা মোহিত কুমার নাথ, ফন্টু চাকলাদার, আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ আওয়ামী লীগের অন্যসব নেতারা দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যুবলীগ নেতা সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ৫ আগস্টের আগেই ভারতে অবস্থান করছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী রেন্টু চাকলাদার দেশের বাইরে নিরাপদেই আছেন।

জেলার ৮ উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশরাই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আত্মগোপনে আছেন। এদের অনেকে এলাকায় থাকলেও দিনের বেলায় প্রকাশ্যে আসছেন না বলে জানা গেছে।

যশোর শহর আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগের যেসকল নেতা-কর্মী বিগত দিন অত্যাচার-নিপীড়ন করেছেন তাদের কেউ প্রকাশ্যে আসছেন না। সীমিত সংখ্যক নেতা ও জনপ্রতিনিধি দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারলেও সিংহভাগ নেতারা এখনো যেখানে সেখানে আত্মগোপনে আছেন। এদের অনেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান।

যশোর সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৫০ জন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা ভারতে চলে যাওয়ার খবর প্রকাশ হওয়ায় রীতিমত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের বলেন, যারা গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা আছে। পলায়নের চেষ্টাকালে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।