আজ শুভ জন্মাষ্টমী

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হিন্দুধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ শুভ জন্মতিথি। এই তিথিতে কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । দিনটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করেন।
এবার যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বানভাসিদের সহায়তার জন্যে জন্মাষ্টমী উৎসবের ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সাথে এবারের অনুষ্ঠানমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। রোববার শহরের লালদিঘি পাড়ের পরিসভা মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ কথা জানান।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন। পৃথিবী থেকে দূরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যেই মহাবতার এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভশক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে।
হিন্দু পঞ্জিকামতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি বছর মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালনসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত রাজাকে ধ্বংস করেন এবং ধমরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব হয়।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারি ছুটি । বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনুস পৃথক বাণীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া পৃথক বাণীতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে যশোর শহরের লালদিঘি পাড়ের পরিসভা মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, এবারের অনুষ্ঠানমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ধর্মীয় পূজা পাঠ ও আচার বিধির বাইরে এবার অন্যকোনো আয়োজন হবে না। বাংলাদেশের একটি বিশাল অঞ্চলে বন্যার কারণে এবারের জন্মাষ্টমীর আনন্দ শোভাযাত্রায় সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, বর্ণিল আঙ্গিকের সাজসজ্জা, তোরণ নির্মাণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি অতিথি বরণ পর্বেও সাশ্রয়ী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার সকালে মন্দিরে মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০ টায় ঐতিহাসিক মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে ভক্তবৃন্দ সমবেত হবেন। ১১ টায় শত কন্ঠে গীতা উচ্চারিত হবে। বেলা ১২ টায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জালন করা হবে। আলোক প্রজ্জালন পর্বের পর দেশ, জাতি ও বানভাসি মানুষের কল্যাণ কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রা মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান থেকে বের হয়ে নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে উপস্থিত হবে এবং দুপুর ২ টায় ধর্ম- বর্ণ সকলের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আযোজিত এই জন্মাষ্টনী অনুষ্ঠানের ব্যয় সংকোচনের অর্থ কুমিল্লা ও ফেনীর বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে যশোরের সবকয়টি উপজেলা উদযাপন পরিষদেও নেতৃবৃন্দকে অর্থ সংগ্রহের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দান সামগ্রীতে পরিণত করে বন্যা সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের পূজা উদযাপন পরিষদেও নেতৃবৃন্দের সহায়তায় ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানের পর একটি বিকাশ নম্বও রেজিস্ট্রেশন করবে যার মাধ্যমে সকলের অনুদান গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সহসভাপতি দুলাল সমাদ্দার, অ্যাড. প্রশান্ত দেবনাথ, যুগ্ম-সম্পাদক রতন আচার্য্য, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুকুমার সিকদার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অঞ্জন সাহা, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন কুমার পাল প্রমুখ ।